• ঢাকা

  •  বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

ছুটির ফাঁকে

দ্বীপান্তরের আন্দামান (পর্ব-১)

অজিত কুমার দত্ত

 প্রকাশিত: ০৭:৩৬, ৮ জুলাই ২০১৮

দ্বীপান্তরের আন্দামান (পর্ব-১)

অবশেষে দু'ঘন্টার বিমান যাত্রা করে আমরা পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দরে অবতরণ করলাম। তখন বেলা পৌনে একটা। আমাদের জন্য ট্যুরিস্ট এজেন্সির গাড়ী অপেক্ষা করছিল। কারন দমদম নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকেই প্রায় একঘন্টার বেশি লেট ছিল।

এটা আমাদের গ্রুপের অনেকেরই প্রথম বিমান যাত্রা বলে এক্সাইটমেন্টটা ছিল আলাদা। টেক অফ করার সময়, আবার হাজার হাজার ফুট উপরে মেঘমণ্ডলের উপরে দিয়ে চলা, নিচের কলকাতা শহরকে কি অপূর্ব লাগছিল। আর যখন মেঘগুলি ফ্লাইটের কাছাকাছি উড়ে যাচ্ছিল মনের আনন্দে আপন গন্তব্যের উদ্যেশ্যে, তখনকার ভাললাগা সত্যিই অবর্ণনীয়। কখনো বা নিচে বঙ্গোপসাগরের নীলাভ জলরাশি দেখছিলাম। সে কি অপূর্ব নয়নাভিরাম দৃশ্য; বলে শেষ করা যাবেনা। ---মনের কোনে উঁকি দিলো ছোটবেলার কথা। আকাশে উড়োজাহাজ দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখতাম, যেতে যেতে কখনো মেঘের নিচে ঢাকা পরে গেলো। আবার হঠাৎ করে বেড়িয়ে এল মেঘের অন্তরাল থেকে। এখন তা নিজেই উপলব্ধি করছি! দেখতে দেখতেই চলেছি। মেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়ে বলল, এসে গেছি মনে হয়, ঐ যে দূরে ছোট ছোট দ্বীপ দেখা যাচ্ছে, সবুজ গাছে ঢাকা অরণ্যের মতো। ---হ্যাঁ তাই তো ! বাড়িঘর নজরে এল, আর আমাদের ফ্লাইট থেকে ক্রমশই নিচে নামতে শুরু করেছে। আমরা এসেগেছি, এই তো পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দর দেখা যাচ্ছে।

ফ্লাইট থেকে নেমে লাগেজ পয়েন্টে অপেক্ষা করতে হলো কিছুক্ষণ। আমাদের লাগেজ পেয়ে ট্রলিতে বাইরে আনার পর ট্যুরিস্ট এজেন্সির একটি গাড়িতে মালপত্র দিয়ে আমরা অন্য একটি গাড়িতে উঠে বসলাম। আর গাড়িতে উঠে উপলব্ধি করলাম, কি সাংঘাতিক ক্ষুধায় কাতর সবাই। সেই সকাল সাতটায় কল্যাণীয়া পিংকির (পিংকি আমাদের সহযাত্রী প্রতুল ভদ্রের বড় মেয়ে; আমাদের আদরের ভাইঝি) বাসায় ভাত খেয়ে সকাল আটটায় এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম। আমরা কোচবিহারের বাসিন্দা হওয়ায় দু'দিন আগেই নিউ কোচবিহার থেকে ট্রেনে রওনা হয়ে বরানগরে পিংকির শ্বশুরবাড়ীতে উঠেছিলাম। পরদিন সকাল সাড়ে ১০টায় আমাদের ফ্লাইট থাকায় তাড়াতাড়ি খেয়ে শোয়ে পড়লাম।

স্নান কলকাতা থেকেই করে আসা হয়েছিল তাই হোটেলে লাগেজ রেখে ট্যুরিস্ট এজেন্সির লোকেরা আমাদের খাবার হোটেলে নিয়ে গেলো। নিজের পছন্দে খাবারের ব্যবস্থা। মাছ, মাংস, ভাত-ডাল না বিরিয়ানি আপনার ইচ্ছেমতো নিতে পারেন। দক্ষিণ ভারতীয় খাবারের ব্যবস্থাও আছে। অবশ্য আমরা সবাই মাছ-ভাতই খেলাম।

একটি গাড়ি আমাদের জন্য বরাদ্দ। ড্রাইভার আমাদের হোটেলে নামিয়ে দিয়ে গেলো। হোটেলটি একটি টিলার উপরে রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা উচুঁতেই। আমাদের ছয় জনের জন্য দোতলায় তিনটি বিশাল এসি রুম। বেশ আরাম করে ঘন্টা খানেক ঘুমিয়ে নিলাম। আগেই ড্রাইভার বলে গিয়েছিল, স্যার রেডি থাকিয়ে, আজ নাজদিক সাইট সিন দেখনেকেলিয়ে নিকালেগা, ঠিক তিন বাজকে।
সস্ত্রীক লেখক
আমরা প্রস্তুত হতে না হতেই গাড়ীর ড্রাইভার এসে হাজির। স্যার চলিয়ে। আমরা সবাই গাড়িতে উঠলাম। সেভেন সিটার মাইক্রোবাস। সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও গোছানো শহরের প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে ছুটে চলল আমাদের গাড়ী। আমরা বেশ রোমাঞ্চিত। কাঙ্খিত আন্দামানে শেষ পর্যন্ত আসা হলো। রাস্তাগুলি এত ভালো যে বলে বোঝানো যাবে না। চলতে চলতে ঠিক সাগরের গা ঘেঁষে মসৃণ রাস্তা দিয়ে আমাদের গাড়ি চলেছে। যদিও লোহার রেলিং আছে তবুও গাড়ি বেশ গতিতে চলায় আমরা মনে মনে বেশ আতঙ্কিত ছিলাম। যদি একটু ভুল করে ড্রাইভার, একদম আগাধ জলে সলিল সমাধি। ড্রাইভারকে বললাম, থোৱা আহিস্তা চলিয়ে ভাই। বেশ আঁকা-বাঁকা রাস্তা। একটা বাঁক ঘুরতেই দেখা গেলো নারকেল গাছের সারি। আর নিচে কিটকট (ইজি চেয়ারের মতো) পাতা রয়েছে। কিটকট প্রতি ১০ টাকা দিলেই নারকেল বনে বসে সামনের শান্ত সাগরের সুন্দর লহরীর মনোমহিনী দৃশ্য আপনার মন ভুলিয়ে রাখবে। ড্রাইভার বলল এই জায়গাটার নাম কার্বন কেভ। সাগর এখানে একটু খানিকটা বেঁকে ভিতরের দিকে ঢুকেছে বলেই হয়তো কেভ বলা হয়েছে। কিন্তু কার্বন কেভ কেন? তা জানা গেলো না।

সাগরের কিলোমিটার খানেক দূরে একটি সর্পিল আকারের অতি-অতি ক্ষুদ্রতম একটা দ্বীপ। একসময় নাকি রস আইল্যান্ড যাবার রাস্তার ছিল এ দিক দিয়ে। যাক ওখানে নাকি এখন সাপের আবাসস্থল। কিছুক্ষন কাটিয়ে ফিরে এলাম আমরা। সূর্য তখন অস্তাচলে। সাগরের জলে আবীর রঙে রঞ্জিত করে যেন আমাদের অভিবাদন জানাচ্ছে। কি অপরূপ-রূপ ! দেখিনি কোন দিনও ! ড্রাইভার এবার মেরিনা বীচে নামিয়ে দিলো। বললো ঘন্টাখানেক এখানে বেড়ানো যাবে তারপর অন্য সাইটে নিয়ে যাবে। কি অপূর্ব জায়গা। বিরাট বীচ, পিছনে রাজীব গান্ধী পার্কে রবীন্দ্রনাথের বিরাট মূর্তি। সামনে শান্ত সাগরের মৃদুমন্দ ঢেউ দেখে মন জুড়িয়ে যায়। চলবে...

মন্তব্য করুন: