• ঢাকা

  •  বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গৌরীপুরে জীবানুনাশক ছিটানোর দাবী

রায়হান উদ্দিন সরকার, গৌরীপুর প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: ১১:১২, ২৭ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গৌরীপুরে জীবানুনাশক ছিটানোর দাবী

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ): করোনাভাইরাসকে (কভিড-১৯) পৃথিবীব্যাপী মহামারি ঘোষণা করেছে ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশন (ডব্লিউএইচও)। দেশে করোনাভাইরাস ঠেকানোর একমাত্র উপায় প্রতিরোধ। এটি নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে প্রতিরোধের বিষয়ে জোর দিতে হবে। কারণ প্রতিরোধই প্রতিকার। তাই আমরা যদি প্রতিরোধে মনোযোগ দেই তাহলে প্রতিকারের জন্য বাড়তি কোনও কিছুর প্রয়োজন হবে না। সুতরাং এ রোগের প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ অতি গুরুত্বপূর্ণ। 

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সচেতন নাগরিকের দাবী ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য গৌরীপুর উপজেলার পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়নের বাজার, হাসাপাতাল, ক্লিনিক, শহর, রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি ও অলিগলিতে দিনে অন্তত একবার স্প্রেয়ার গাড়ি দ্বারা জীবানুনাশক ছিটানো অতি জরুরি।

জীবাণুযুদ্ধে বা করোনা মোকাবেলায় সকল নাগরিকের আঙ্গিনায় বা বসতবাড়ি পানি বা স্প্রে দ্বারা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাগিদ দিতে হবে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে যেখানে সেখানে স্পর্শ করা যাবে না, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। 

মহামারি করোনা মোকাবেলায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ফলে এই ছুটির সময়ে ঢাকা ছেড়ে এ উপজেলায় বিভিন্ন স্থানে ফিরে গেছেন মানুষ। এই সময়ে  জীবাণু বহনকারী কেউ উপজেলায় প্রবেশ করতে পারে। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। তাছাড়া যারা ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে গেছেন তাদের প্রত্যেকের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাধ্যতামূলক বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।

গৌরীপুর উপজেলার বাসিন্দা লুৎফর রহমান খোকন বলেন, যদি কোনোভাবে এই ভাইরাস গৌরীপুরে এসে যায়, তবে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তাই আমরা চাই না এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হোক। এজন্য আগে থেকেই আমাদেরকে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ি সচেতনমূলক প্রতিকার ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি যাতে এসমস্ত বালা মুছিবত থেকে তিনি আমাদের রক্ষা করেন। জনপ্রতিনিধিদের উচিত অলিগলিতে দিনে অন্তত একবার স্প্রেয়ার গাড়ি দ্বারা জীবানুনাশক ছিটানো।

তাতঁকুড়া নিবাসী অ্যাড. মিলন বলেন, পত্রিকা পড়ে জেনেছি যে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের জন্য ৩৩ কোটি ২লাখ টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় যত বরাদ্দ আসবে সকল বরাদ্দ যেন সঠিকভাবে কাজ করা হয় প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

তিনি আরও বলেন, গৌরীপুর উপজেলায় ওয়াটার স্প্রেয়ার ট্রাক না থাকলে, ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নিতে পারেন অথবা লোকাল ওযাটার স্প্রে -বার তৈরি করে এবং পিক আপ গাড়িতে কয়েকটি ড্রাম বা পানির ট্যাংক বসিয়ে সকল পথঘাটে জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানো সম্ভব।

'কভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষের মল-মূত্রে কয়েকদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। আর সেই মানব-মল থেকেই মশা-মাছি দ্বারা আরও মারাত্মক হারে ছড়ি়য়ে পড়তে পারে করোনা', মন্তব্য বলিউড অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনের। গৃহবন্দি অবস্থায় সোশ্যাল মিডিয়াতেই একটি ভিডিও পোস্ট করে এই বার্তা দিয়েছেন তিনি।

গৌরীপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি মহসিন মাহমুদ বলেন, রংপুর মহানগরীতে করোনাভাইরাসমুক্ত রাখতে রাস্তাঘাটসহ জনসমাগম এলাকাগুলোতে জল কামানে ও স্প্রে মেশিনের সাহায্যে জীবাণুনাশক ছিটানো শুরু করেছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। গৌরীপুর থানা এ কার্যক্রম শুরু করলে অনেক প্রসংশিত হবেন। তাছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যশোরের কেশবপুর ও মনিরামপুরে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সেরে সহায়তায় এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তিনি গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে এ কার্যক্রম শুরু করার জন্য সচেতন নাগরিকের পক্ষ থেকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানান।

গৌরীপুর পৌরসভা, ব্যক্তি উদ্যোগে পৌর কাউন্সিলর আব্দুল কাদির, এসো গৌরীপুর গড়ি-সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা যাতে হাত ধুয়ে জীবানুমুক্ত হতে পারে সেজন্য পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বসানো হয়েছে পানির  ড্রাম। এতে প্রসংশিত হয়েছেন উদ্যোক্তাগণ। 

এদিকে সরকারি নির্দেশনা মেনে মানুষ নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শহরে ওষুধ, মুদি দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শহর জনমানব শূন্য। এতে প্রসংশিত হয়েছেন গৌরীপুর থানা ও গৌরীপুর উপজেলা প্রশাসন।

সাংবাদিক আজম জহিরুল বলেন, কভিড-১৯ অন্যান্য ভাইরাস থেকে ভয়ানক ছোঁয়াচে, মানুষ থেকে মানুষে অতিদ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এক রাষ্ট্র থেকে অন্য রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ প্রবাসী নাগরিকদের দেশে প্রত্যাবর্তন, বিনোদন বা পরিজনের সঙ্গে সময় যাপনের জন্য আগমন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় রাস্তাঘাট পানি দ্বারা ধোয়া এবং জীবাণুনাশক স্প্রে কার্যক্রম শুরু করা অতি জরুরী।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পাবলিক প্লেস, পরিবহন ও যেখানে মানুষের স্পর্শ আছে বা হচ্ছে সেই সব স্থানগুলো জীবানুমক্ত করার পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাস সংক্রমন মোকাবেলা, মশক নিধন ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য এগিয়ে আসার জন্য আহবান, শহরে জীবানুনাশক ছিটানো এ নিয়ে জনসাধারণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও দাবী উঠেছে।

“ওয়াশ বাংলাদেশ, জীবানুমুক্ত করো বাংলাদেশ এবং ওয়াশ গৌরীপুর, জীবানুমুক্ত কর গৌরীপুর উপজেলা” এ স্লোগান নিয়ে এগিয়ে আসুন এবং স্প্রে করুন নিজ নিজ আঙ্গিনায় ও বাড়িঘরে এবং নিজ শহরে বা মহল্লায়, বন্ধ করুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। পরিষ্কার পরিচ্ছন ও জীবানুমুক্ত রাখতে হবে চারপাশ। নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করতে শুরু করতে হবে। নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করে রাখতে হবে। পানি ছিটানোর মতো সরঞ্জাম নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও উদ্যোক্তাদের কাজ করার আহবান জানান সচেতন নাগরিক সমাজ।

মার্চ ২৭, ২০২০

মন্তব্য করুন: