• ঢাকা

  •  বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

বাংলাদেশ

শালীহর গণহত্যা দিবস, বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২২ আগস্ট ২০২০

শালীহর গণহত্যা দিবস, বধ্যভূমিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ): ২১ আগস্ট। ১৯৭১ সালের এই দিনে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শালীহর গ্রামে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যায় ১৪ জন শহীদ হয়েছিলেন। যাদের মধ্যে ১ জন মুসলিম ও ১৩ জন হিন্দু।

সেদিন পাকবাহিনীর ভয়ে হিন্দু পরিবারের সদস্যরা শহীদদের মৃতদেহ সৎকার করতে না পেয়ে মাটিতে পুতে রেখেছিল। আজ এসব স্মৃতিচিহ্ন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলীন হওয়ার পথে।

এ উপলক্ষে ২১ আগস্ট সন্ধ্যায় বধ্যভূমিতে মোমবাতি প্রজ্জলন ও ফুলের তোড়া দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ আবিদুর রহমানের সভাপতিত্বে ও গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান কাউসারের সঞ্চালনায় এ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এই আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান, গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বোরহান উদ্দিন খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ আব্দুর রহিম, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মোঃ নাজিম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নিলুফার আনজুম পপি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহাম্মদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল রানা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সালমা আক্তার রুবি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, গৌরীপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ শফিকুল ইসলাম মিন্টু, সাংবাদিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি বেগ ফারুক আহাম্মদ, বিআরডিবির চেয়ারম্যান মাসদুর রহমান শুভ্র, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি আবুল ফজল মুহম্মদ হীরা, পৌর শাখার সভাপতি উজ্জল চন্দ্র, এসএসসি-৯৯ ব্যাচের সমন্বয়ক প্রদীপ বাগচী প্রমুখ।

<iframe allowfullscreen="" frameborder="0" height="460" src="//www.youtube.com/embed/8II680e-82M" width="725"></iframe>

১৯৭১ সালের ২১ আগস্ট পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী একটি বিশেষ ট্রেনে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার পথে বিসকা রেলওয়ে স্টেশনে নেমে পড়েন। এরপর উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত শালীহর গ্রামে হানা দিয়ে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তাণ্ডব চালায়। গুলি করে হত্যা করে ১৪ জন নিরীহ মানুষকে। গুলির মুখ থেকে কলেমা পাঠ করে সেদিন প্রাণে বেঁচে যান নগেন্দ্র চৌকিদার। তবে পাক বাহিনী ধরে নিয়ে যায় গ্রামের বাসিন্দা ছাবেদ আলী বেপারীকে। এরপর দীর্ঘ ৪৮ বছরে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

সেদিন গ্রামে ঢুকেই পাকবাহিনী প্রথমেই গুলি করে হত্যা করে নিরীহ কৃষক নবর আলীকে। এরপর একে একে হত্যা করে মোহিনী মোহন কর, জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর, যোগেশ চন্দ্র বিশ্বাস, কিরদা সুন্দরী, শচীন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস, তারিনীকান্ত বিশ্বাস, দেবেন্দ্র চন্দ্র নম দাস, কৈলাস চন্দ্র নম দাস, শত্রুঘ্ন নম দাস, রামেন্দ্র চন্দ্র সরকার, অবনী মোহন সরকার, কামিনী কান্ত বিশ্বাস, রায়চরণ বিশ্বাসকে।

শহীদ পরিবারের সদস্য গিরিবালা বলেন, 'পাঞ্জাবিরা আমার শ্বশুড় কামিনী কান্ত বিশ্বাস, কাকা শ্বশুড় তারিনী কান্ত বিশ্বাস, কাকী শাশুড়ী কিরদা সুন্দরীকে চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করে।

এদিকে শহীদ পরিবারগুলোর অভিযোগ, তারা মানবেতর জীবনযাপন করলেও কেউ তাদের খোঁজ নেয় না।

শহীদ জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর এর নাতনী, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও তাহিরপুর উপজেলা শাখার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক  অমল কান্তি কর জানান, পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী গুলি করে হত্যা করে তার ঠাকুদা জ্ঞানেন্দ্র মোহন কর এবং ঠাকুরদার ভাই মোহিনী মোহন করকে।

পরে প্রাণ ভয়ে জ্ঞানেন্দ্র মোহন করের ছেলে বাদল চন্দ্র কর সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় চলে আসেন। সেখানে তিনি পল্লী চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় সহযোগিতা করেন।

অমল কান্তি কর আরও জানান, তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি নিবেদিত প্রাণ। মিথ্যে মামলায় বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে এক বছর জেল খাটেন। তখন তার দোকান লুটপাট হয়। তিনি শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ১৮ জুলাই, ২০১৭ ইং তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরাবর আবেদনপত্র জমা দেন।

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়িঘর আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর শহীদ জ্ঞানেন্দ্র মোহন করের ছেলে বাদল চন্দ্র কর পাক হানাদার বাহিনীর ভয়ে তাহিরপুর উপজেলার টেকেরঘাট সাব-সেক্টরে চলে আসেন। সেখানে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবার দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে বাদল চন্দ্র কর তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। বাদল চন্দ্র কর ২০১৪ সালে মারা যান। 

তার ছেলে অমল কান্তি কর বর্তমানে তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি গত বছরের ২৮ নভেম্বর গৌরিপুরের শালীহর গ্রামের গণহত্যায় শহীদ পরিবারের সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন কোন সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তিনি।

আগস্ট ২২, ২০২০

মন্তব্য করুন: