• ঢাকা

  •  বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

অপরাধ

পাগলা মিজান-রাজিব ঘনিষ্ঠ শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের চাঁদাবাজির রহস্য ফাঁস

নিজস্বপ্রতিবেদক

 প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পাগলা মিজান-রাজিব ঘনিষ্ঠ শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলালের চাঁদাবাজির রহস্য ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ সময় কারাগারে রয়েছেন এক সময়ের ভয়ঙ্কর শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল। কিন্তু কারাবন্দি থাকলেও থেমে নেই তার বেপরোয়া চাঁদাবাজি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় তাদের লোকজনকেই ব্যবহার করে নিজের চাঁদাবাজির রাজত্ব টিকিয়ে রেখেছেন।

ফ্রিডম মিজান ওরফে পাগলা মিজান এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ, তিন রাস্তার মোড়, নারায়ণগঞ্জ ও বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা চাঁদাবাজি করতেন।

র‌্যাবের দুর্নীতি ও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে ফ্রিডম মিজান ও মোহাম্মদপুরের সুলতান হিসেবে পরিচিত রাজীব গ্রেফতার হলেও ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে যত্রতত্র গড়ে উঠা অবৈধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (অটোরিকশা) ও ফিটনেসবিহীন লেগুনার স্ট্যান্ড থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল চক্রের ফ্রি স্টাইল চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি। সাধারণ শ্রমিক ও পরিবহন চালকদের অভিযোগ, তাদের চাঁদা দিতে বাধ্য করছে চিহ্নিত একটি চক্র।

সূত্র জানায়, পিচ্চি হেলালের পক্ষে তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ হিসেবে পরিচিত লাললা বিহারী, লাফা বিপ্লব ও শাহ আলম লেগুনা, অটো রিকশা থেকে চাঁদা আদায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দিনের পর দিন তারা নারায়ণগঞ্জ ও বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ডে কয়েক লাখ টাকার চাঁদাবাজি করছেন।

একেকটি লেগুনা থেকে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা করে চাঁদা উঠানো হচ্ছে। আর বাসসমূহ থেকে সপ্তাহ বা মাসিক ভিত্তিতে এই চাঁদার অঙ্ক হচ্ছে কয়েক লাখ টাকা। সব মিলিয়ে কারাবন্দি ভয়ঙ্কর শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের পকেটে যাচ্ছে চাঁদার প্রায় কোটি টাকা।

জানা যায়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ ও তিন রাস্তার মোড়সহ মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকার ব্যস্ততম সড়ক দখল করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক (অটোরিকশা) ও ফিটনেসবিহীন লেগুনার স্ট্যান্ড। ফলে তীব্র যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারীরা।

এসব যানবাহনকে পুঁজি করে দৈনিক লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে নিজের আখের গুছিয়ে নিচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা। স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখের সামনেই এগুলো দেদার চলাচল করছে। অহরহ যানজট বাঁধাচ্ছে।

স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্যও চরম ভোগান্তির সৃষ্টি করছে ইজিবাইক। প্রায়ই ঘটাচ্ছে দুর্ঘটনা। তবুও নিষিদ্ধ এ যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে অবৈধ এসব যান চলাচলের মৌখিক বৈধতা করে নিচ্ছেন পিচ্চি হেলালের সন্ত্রাসী চক্র।

স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে তারাই নিত্যনতুন রুট বানাচ্ছেন। শত শত নিষিদ্ধ যানের ভিড়-ভাড়াক্কা গড়ে তোলছেন।

সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে আরও জানা গেছে, কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকায় জমি কেনাবেচা ও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত। মোহাম্মদপুরের পাশাপাশি দুই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর পাগলা মিজান ও রাজীবের সঙ্গে জমি দখলবাজির সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা ছিলেন তিনি।

র‌্যাবের অভিযানে তাঁর এই অপকর্মের দুই ‘পার্টনার’ গ্রেফতার হলে সাময়িক বেকায়দায় পড়েন পিচ্চি হেলাল। এরপর আবারও ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণির সুবিধাভোগী নেতাকে ম্যানেজ করে আবারও জমি দখলবাজিতে মেতে উঠেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিচ্চি হেলালের সহযোগী বসিলার মফু ইতোমধ্যেই ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। পাগলা মিজান ও রাজীব গ্রেফতার হওয়ার পর কিছুদিন আতœগোপন করেন। এরপর সুবিধাভোগী চক্রটির শেল্টার নিয়ে নিজের বসের নির্দেশে আবারও পুরনো মানুষ ঠকানো ব্যবসায় বীরদর্পে আত্নপ্রকাশ করেছেন। সম্প্রতি তিন রাস্তার মোড় এলাকায় সইলি হাউজিংয়ের প্রায় ৮০ কাঠা জমি দখল করে রেখেছেন এই মফু।

সূত্র মতে, সম্প্রতি নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিপুল ভোটে কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হয়েছেন আসিফ আহমেদ। শিক্ষিত, ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী আসিফ চরম বেকায়দায় রয়েছেন নিজ এলাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল চক্রের দাপটে। ইতোমধ্যেই তিনি নিজস্ব উদ্যোগে মাদক বিরোধী অভিযান জোরালো করার পর ওই চক্রটির আতে গাঁ লেগেছে।

তাদের মাদক নেটওয়ার্ক ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ায় তারা যানবাহনে চাঁদাবাজি ও জমি দখলবাজির ব্যবসায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এসব অপকর্ম ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অভিযানের দাবি তুলেছেন মোহাম্মদপুর এলাকার সাধারণ মানুষ। #

মন্তব্য করুন: