• ঢাকা

  •  বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

সাহিত্য-সংস্কৃতি

স্মৃতির প্রহর ǁ শামীম আরা জামান

শামীম আরা জামান

 প্রকাশিত: ১২:৩৮, ১৭ জুলাই ২০২০

স্মৃতির প্রহর ǁ শামীম আরা জামান

অনেকদিন যাবৎ তূর্ণা কোথাও যায় না, আর বিভিন্ন ঝামেলার কারণে যাওয়াও হয় না। তরুন একটু সময় পেলেই বেড়িয়ে পড়তো।কিন্ত ইদানীং তরুনের ব্যস্ততা বেড়েছে। কাজ, আর কাজ এর বাইরে যেন জীবনের কিছু নেই দুই সন্তান আর বাসা এই গন্ডির মাঝে তূর্ণার জীবন আটকে আছে।কখনোই এই বন্দী জীবন,কর্মহীন জীবন তূর্ণার পছন্দ নয়। দম বন্ধ হয়ে আসে মাঝে মাঝে। পুরাতন ছবিগুলো আরো কষ্ট দেয়  তাকে, ফেইসবুকের মেমোরিতে প্রতিদিনই প্রায় আপডেট দিচ্ছে। জীবনের সময় কি শেষ হয়ে আসছে?এতো টাকা তো তার দরকার নেই, তার তেমন কোন চাহিদা নেই।তবুও কেন তরুন এতো ব্যস্ত।বাসায় ঢুকেই টেলিভিশন আর মোবাই তার সঙ্গী। তূর্ণার সাথে কথা বলার চেয়ে গ্রুপ ম্যাসেঞ্জার আর ভাইবার ইমোতে মহা ব্যস্ত। অথচ অফিস থেকে যখনি ফিরতো কেউ না থাকলেও সারাদিনের জমানো কথাগুলো চলতো শেষ না হওয়া প্রর্যন্ত।সাত/আট বছর যাবৎ অনেক দুরত্ব তৈরি হয়েছে।

বাচ্চাদের যতো কাজ, ডাক্তার, কোথাও যাওয়া থেকে শুরু করে সব একাই করতে হয় তূর্ণাকে।

অতীত সুখের স্মৃতি তখন জ্বালা ধরায়। বছর দুই যাবৎ ছুটির দিনেও কাজের নামে বেরিয়ে যায়।না যেতে পারলে অস্থিরতায় ভোগে।কিছু কিছু বিষয়ে তূর্ণা দ্বিধাগ্রস্ত। তার পরও চলে যাচ্ছে সময়।বাচ্চাদের জন্য সব পরিবেশ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে যায় তূর্ণা। ছোট বাচ্চাদের মতো বায়না ধরলো তূর্ণা,এ মাসে দু'দিন সরকারী ছুটি আছে এই সময়টুকু আমাদের দিতে হবে, বিশেষ করে বাচ্চাদের। ছোটবেলায় সিনেমা হলে নিয়ে গিয়েছে ওদের কিন্ত মনে নেই ৩/৪ বছরের স্মৃতি এতো মনে থাকার কথা নয়।কিন্ত তরুনের মিটিং এটা সেটা সময় নেই।বাচ্চারা অস্থির করে তুলছে। বাধ্য হয়েই দুই সন্তান নিয়ে সিনেপ্লেক্সে গেলো, ওদের পছন্দের ছবি দেখতে।

বিয়ের পর তরুনের বন্ধু আর তাদের বউদের নিয়ে এক সাথে সবাই মজা করে ছবি দেখেছিলো। আজ খুব মনে পড়ছে, সেই স সোনালী দিনের কথা। আজ এতো শূন্য মনে হচ্ছে নিজেকে। একটা পরিচিত পারফিউমের গন্ধটা বার বার টানিছিলো তাকে। মনে মনে তরুনের উপস্থিতিটা ভেতরে নাড়া দিচ্ছিলো।খুব ইচ্ছে ছিলো এক সাথে বসে সিনেমা দেখবে। মোবাইলে ফোন করেছিলো তূর্ণা, এ কথা বলতে যে চলে এসো, সিনেমা,দেখতে একটা টিকিট বেশি কেটে রেখেছি। ফোন রিসিভ করেনি। যখন অন্ধকারের মাঝে স্ক্রিনের আলো এসে পড়লো দর্শক গ্যালারিতে তূর্ণা নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিলো না। তরুনের হাত শান্তা নামের সেই মেয়েটার হাতে ধরা।বসেছে গা ঘেষে। তূর্ণা আর নিতে পারছিলো না এই দৃশ্য।বাচ্চাদের বসিয়ে রেখে, কিছুটা দূরে এসে ম্যাসেজ করলো কেমন হচ্ছে তোমার মিটিং?  আমরা কি তোমায় নিতে আসবো? সিন করলো ম্যাসেজ, কিন্ত রিপ্লাই নেই।হল থেকে বের হয়ে আমার সাথে দেখা করো, আমি বাইরে অপেক্ষা করছি সাথে মেয়েটিকে নিয়ে এসো। তোমার ছুটির দিনের সাথীকে। এবার তরুন কিছুটা নড়ে চড়ে বসলো। চোখ পড়লো বাম সারিতে বসা তূর্ণার উপর,বাচ্চাদের উপর।তূর্ণা স্ক্রিনের পরিবর্তে অপলক তাকিয়ে আছে ওদের দিকেই,,,,চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে সোনালী সব স্মতির প্রহর।

মন্তব্য করুন: