• ঢাকা

  •  শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

বাংলাদেশ

খরচ যোগাতে অনার্স পড়ুয়া শামীম বিক্রি করছেন ইফতারসামগ্রী

শাহ্ আলম ভূঁইয়া, বিশেষ প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: ১৩:১৭, ২২ এপ্রিল ২০২১

খরচ যোগাতে অনার্স পড়ুয়া শামীম বিক্রি করছেন ইফতারসামগ্রী

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ): করোনা মহামারির কবলে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে শুধুমাত্র পড়াশোনার ক্ষতি হয়েছে তা নয়। অনেকেই পড়াশোনা করেন অন্যকে পড়িয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজপড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থী আছেন যাদের পরিবার তাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে অক্ষম। তারা বাসায় বাসায় গিয়ে টিউশনি করে নিজের খরচ চালানোসহ বাড়িতে টাকা দেন সংসারের চাহিদা মেটাতে। তেমনি একজন শামীম আলম। তিনি ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের সম্মান তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনাকালে তিনি টিউশন হারিয়েছেন। তারপর, দিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসা, কিন্তু সফল হননি। অভাবের তাড়নায় বর্তমানে তিনি মৌসুম ব্যবসা হিসেবে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করে সংসার ও নিজের খরচ চালাচ্ছেন।

শামীম কলেজের হলে থেকে টিউশনি করে পড়াশোনার খরচ যোগাতেন। করোনার প্রকোপে বন্ধ হয়ে যায় কলেজ ও হল। চলে যায় তার টিউশনি। বাড়ি ফিরে তিনি একটি কম্পিউটার কিনে ব্যবসা শুরু করলে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। এমন অবস্থায় জীবিকার তাগিদে রমজান মাসে গ্রামে ইফতারের দোকান দেয় শামীম। 

শামীমের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের নহাটা গ্রামে। তার বাবা হাবিব উল্লাহ গ্রামের দরিদ্র কৃষক। চার ভাই-বোনের মধ্যে শামীম বড়। তার  দুই বোন স্থানীয় স্কুলে নবম শ্রেণী ও নার্সারিতে পড়াশোনা করছে। ছোট ভাই  ময়মনসিংহে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করতো। সম্প্রতি করোনায় কাজ হারিয়ে সেও এখন বেকার।

সরেজমিনে দেখা যায়, মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে শামীম নহাটা বাজারে সড়কের পাশে ইফতারের দোকান নিয়ে বসে আছেন। জানতে চাইলে নিজের ইফতার বিক্রেতা হওয়ার গল্পটা বের হয়ে আসলো তার মুখ থেকেই।

তিনি বলেন, অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর অভাবের তাড়নায় বাবা পড়াশোনার খরচ দিতে পারতো না। তাই খরচ যোগাতে আট হাজার টাকায় দুটি টিউশনি শুরু করি। কিন্তু করোনায় কলেজ বন্ধের সাথে টিউশনিও চলে যায়। অর্থকষ্টে বাড়ি ফিরলেও সংসারে অভাবের তাড়নায় খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো। কিছু ত্রাণ সহযোগিতা পেলেও সেটা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। তাই জীবিকার তাগিদে এই পেশায় আসা। তবে সংকট কেটে গেলে পড়াশোনা করতে ফিরে যাবো ঢাকায়।

গত বছর করোনাকালে রাজধানী থেকে বাড়ি আসে শামীম। বাবার একা আয়ে সংসার না চলায় একটি কম্পিউটার কিনে গ্রামে আইটি ব্যবসা শুরু করেন। সেখানে চাকরির আবেদন, শিক্ষার্থীদের ভর্তি, লেখা কম্পোজ, প্রিন্টসহ বিভিন্ন কাজ করা হতো। করোনায় কাজ না থাকায় এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। অবশেষে, পরিবারের কাছ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে রমজান মাসে ইফতারের দোকান দেন। এ দোকানে প্রতিদিন তার এক হাজার থেকে বারোশ' টাকা বিক্রি হয়। এতে লাভ হয় তিনশো' টাকার মতো। কোনোরকম দিন চলে তাদের। 

শামীমের ইচ্ছে, পড়াশোনা শেষ করে তিনি একজন ব্যাংকার হবেন। অভাব দুর করে বাবা-মা, ভাই-বোনের মুখে ফোটাবেন হাসি।

এপ্রিল ২২, ২০২১

মন্তব্য করুন: