• ঢাকা

  •  বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৮, ২০২৪

অর্থ ও কৃষি

ভুট্টা পাতার হাট

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট সংবাদদাতা

 প্রকাশিত: ০৪:৫১, ১৫ এপ্রিল ২০১৮

ভুট্টা পাতার হাট

লালমনিরহাট: তিস্তা, সানিয়াজান ও ধরলা নদীর তীরবর্তী লালমনিরহাট জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল হলো ভুট্টা। চলতি মৌসুমে জেলায় ভুট্টা চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে গেছে। ক্ষেতের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ফলনও ভালো হবে।

ইতোমধ্যে চর এলাকাগুলোতে ক্ষেত থেকে ভুট্টা তোলা শুরু হয়েছে। আগামী ১৫/২০ দিনের মধ্যে পুরোদমে শুরু হবে। ফলে এখন কৃষকরা তাদের ভুট্টা ক্ষেতে গাছের মাথা ও পাতা ছিড়ে ফেলছেন।

এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চর অঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষ ভুট্টা গাছে পাতা বিক্রি করে বাড়তি কিছু আয়ের চেষ্টা করছেন।

প্রতিবিঘা ভুট্টা ক্ষেতের পাতা ও গাছের মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে। কিন্তু তা এখন আর লাগছে না। মাঠে কাজ না থাকায় দিনমজুর শ্রেণীর লোকজন পরিবারের সবাই মিলে ভুট্টা গাছের পাতা ছিড়ে বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাচ্ছেন।

দামে কম হওয়া অনেকেই গোখাদ্য হিসাবে তা ক্রয় করছেন। এতে একদিকে নিম্নআয়ের লোকজনের আয় হচ্ছে, অন্যদিকে কম দামে বিভিন্ন গবাদিপশু খামারিরা তাদের পশুর খাদ্য পাাচ্ছে ও কৃষকদের ভুট্টা উৎপাদনে খরচও কমে যাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভুল্লাহাট, ভোটমারী, হাতীবান্ধা উপজেলার ঘুন্টি, পারুলিয়া, হাতীবান্ধা হাটসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ভুট্টা পাতার হাট বসছে। 

কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী এলাকার দিনমজুর সাইফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এলাকায় কোনো কাজ নেই। তাই আমি ও আমার স্ত্রী প্রতিদিন সকালে চরে গিয়ে ভুট্টা পাতা ছিড়ে নিয়ে এসে ভোটমারী বাজারে বিক্রি করি। এতে প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ দিয়ে কোনো রকম সংসার চলছে। পাতার জন্য ক্ষেত মালিকদের কোনো টাকা দিতে হয় না। কয়েকদিন পর ভুট্টা তোলা শুরু হলে তখন ভুট্টা তোলার কাজ করবো।

একই এলাকার মাদ্রাসা ছাত্র মিজানুর রহমান বলেন, এলাকায় কাজ না থাকায় বাবা বাড়িতে বসে আছে। প্রাইভেটের টাকা দিতে পারছি না। তাই মাদ্রাসা ছুটির পর ৩ দিন ধরে ভুট্টার পাতার ছিড়ে বিক্রি করছি। ৩ দিনে দুইশ ৪০ টাকার পাতা বিক্রি করেছি। 

হাতীবান্ধা উপজেলার চর সির্ন্দুনা এলাকার কৃষক আইযুব আলী জানান, ভুট্টা তোলার ১৫/২০ আগে গাছের পাতা ও মাথা কেটে দিতে হয়। এতে ভুট্টায় সুর্যের আলো পড়লে ভুট্টার রং ভালো হয়। প্রতি বিঘা ভুট্টা ক্ষেতে পাতা ও মাথা কাটতে ২ জন করে শ্রমিক লাগে। কিন্তু এখন তা লাগছে না। অনেকেই পাতা ও গাছের মাথা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে এক দিকে আমাদের উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিম্নআয়ের লোকজন তাদের জীবিকার পথ পেয়েছেন।  

হাতীবান্ধা নদী ও চর উন্নয়নের সভাপতি অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান জানান, এ সময়টা কাজ না থাকায় চর অঞ্চলের নিম্নআয়ের লোকজন বেকার হয়ে পড়ে। কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, ভুট্টার পাতা ও ভুট্টা গাছের মাথা বিক্রি হচ্ছে। ফলে কিছু লোকজন কয়েকদিনের জন্য হলেও তাদের কর্মসংস্থান পায়। অন্যদিকে ভুট্টা উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি পশু খামারিরা কমদামে তাদের গোখাদ্য ক্রয় করতে পারছেন। #

মন্তব্য করুন: