• ঢাকা

  •  শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

প্রবাসের কথা

মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে ফিনল্যান্ড বিএনপি

এমরান হোসেন খান, হেলসিংকি থেকে

 প্রকাশিত: ০৩:২৭, ৯ জুন ২০১৮

মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে ফিনল্যান্ড বিএনপি

হেলসিংকি: ইউরোপে তথা প্রবাসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) আন্দোলনে-সংগ্রামে ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত ফিনল্যান্ড বিএনপি। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক প্রত্যেকটি আন্দোলনে ভূমিকা রয়েছে ফিনল্যান্ড বিএনপি নামক সংগঠনটির।

প্রবাসে বিএনপির যেকোনো আন্দোলন-সংগ্রামের হাতিয়ার এই ফিনল্যান্ড বিএনপি এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। দুই বৎসরের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে যেন ‘খুঁড়িয়ে’ চলছে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ এই সংগঠনটি।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ফিনল্যান্ড শাখার সর্বশেষ কমিটি হয়েছে ২০১৪ সালে।

নতুন কমিটি না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়ছেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে সংগঠনের সাধারণ সদস্যরা অভিভাবকহীন ও সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সোচ্চার ফিনল্যান্ড বিএনপির সক্রিয় নেতা কর্মীরা দাবি জানিয়ে এলেও নতুন কমিটি না হওয়ায় তাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

ফিনল্যান্ডে নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনের নেতারা চাচ্ছেন না নতুন কমিটি দিতে। তারা অভিযোগ করেন, সংগঠনের বর্তমান নেতৃত্ব পদ-পদবি আঁকড়ে রাখার প্রবণতায় ভুগছেন। নতুন সম্মেলন হলে বর্তমান নেতৃত্বে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে, এটাই স্বাভাবিক। এতে পদ-পদবি হারাতে হবে বর্তমান নেতৃত্বকে।

দলীয় নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, এক যুগেরও বেশী সময় ধরে ফিনল্যান্ড বিএনপির সর্বোচ্চ পদে আঁকড়ে থাকা নেতাকে আবারও সেই পদে রাখার জন্য নতুন কমিটি গঠিত হচ্ছে না। এ কারণে সম্মেলন বা নতুন কমিটি ছাড়া যতদিন চালিয়ে নেয়া যায়, তাদের জন্য ততটাই ভালো।

তৃণমূল পর্যায়ের আরেক কর্মী বলেন, দুই বছরের কমিটি যেহেতু পাঁচ বছরে পদার্পন করেছে, তাই নতুন কমিটি না হওয়া পর্যন্ত কালবিলম্ব না করে মেয়াদ উত্তীর্ণ এই কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা খুবই জরুরী। অন্যথায় অগণতান্ত্রিক ও স্বেচ্ছাচারিতার ফলে দলের কার্যক্রম আরো মুখ থুবরে পড়বে। এতে তৃণমূল থেকে তরুণ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠবে না।

আগামী কমিটি নিয়ে ফিনল্যান্ড বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আরও বলেন, অতি দ্রুত কমিটি হওয়া প্রয়োজন। সকল স্থবিরতা কাটাতে পুরাতন নেতৃত্ব বাদ দিয়ে নতুন নেতৃত্ব আসলে মজবুত হবে সংগঠনটি। ফলে নতুন নেতৃত্বও তৈরি হবে।

তারা আরও বলেন, বর্তমানের দায়িত্বে থাকা অগণতান্ত্রিক এই কমিটিকে অপসারণ করে সংগঠনের গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক প্রতিবেদককে বলেন, ফিনল্যান্ড বিএনপির মেয়াদ চার বছর শেষ হওয়ার পরও কেন কমিটি হচ্ছে না, তা জানি না। আমরা ম্যাডাম, তারেক রহমান ও দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।
 
তিনি আরও বলেন, শুধু ফিনল্যান্ডের কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে তা নয়। দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপের অনেক দেশে দলের কমিটি নাই। এ কারণে বলতে গেলে সাংগঠনিক স্ট্রাকচার অনেকটা ভেঙে পড়েছে। অনেকটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। ঐ সমস্ত দেশের বিভিন্ন ইউনিটগুলোতে কমিটি ঘোষিত হলে সাংগঠনিকভাবে প্রবাস বিএনপি অনেক শক্তিশালী হবে।

এ ব্যাপারে প্রবাস বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরামের আর এক শীর্ষ নেতা বলেন, ফিনল্যান্ড বিএনপি কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। তবে নতুন কমিটি কবে, কখন হবে এটা আমি জানি না, বলতে পারবো না। এর বেশি মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের শুরু তথা জানুয়ারিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন বিএনপির জন্য অস্তিত্বের প্রশ্ন। সরকারের নানা কৌশল, হামলা-মামলা মোকাবিলা করতে হলে বিএনপিকেও কৌশলী হতে হবে বলে জাতীয়তাবাদী ঘরানাদের পরামর্শ। তবে, চূড়ান্ত ফলাফল ঘরে তুলতে চাইলে একটি সফল আন্দোলনের বিকল্প নেই। অতীতে এই আন্দোলনে প্রবাস বিএনপি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও মেয়াদোত্তীর্ণ নড়বড়ে নেতৃত্ব দিয়ে কতটুকু ভূমিকা রাখবে দলের বৈদেশিক ইউনিটগুলো এটা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে দেশে-বিদেশে দলের নতুন কমিটি আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে দেওয়া উচিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

জুন ০৯, ২০১৮

মন্তব্য করুন: