• ঢাকা

  •  শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৪

অর্থ ও কৃষি

লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে সবজি চাষে বিপ্লব

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট সংবাদদাতা

 প্রকাশিত: ০৮:৩৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

লালমনিরহাটের চরাঞ্চলে সবজি চাষে বিপ্লব

লালমনিরহাট: শীতকালীন সবজি চাষে লালমনিরহাটসহ উওর ৮ জেলার চরাঞ্চলে বিপ্লব ঘটে গেছে। চরের সবজি এখন ৫০টি বেশি দেশে রফতানি হচ্ছে। এই রফতানি হতে বছরে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। অর্থকরী সফল হিসেবে সবজি চাষ করে কৃষক লাভের মুখ দেখছে।

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশ সবজি চাষে বিশ্বে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য মতে, গত ৪০ বছরে বাংলাদেশে সবজি চাষের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৬ গুন। বেড়েছে জমির পরিমানও। গত এক দশকে সবজি চাষের পরিমান বেড়েছে ৭ শতাংশ হারে।

২০১৬- ২০১৭ অর্থ বছরে রবি মৌসুমে ৫ দশমিক ২৮ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়ে ছিল। কিন্তু গত বছর এই জমির পরিমান ছিল ৫ দশমিক ১০ লাখ হেক্টর।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০১৩- ২০১৪ সালে দেশে এক কোটি ৩৯ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। তিন বছরে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৬ শতাংশ।

এ অঞ্চলে তামাকের পরিবর্তে অর্থকরী ফসল হিসেবে সবজি চাষের দিকে কৃষক ঝুকছে। বিশেষ করে তরুন কৃষকরা বেশী সবজি চাষে মনোযোগ দিয়েছে। সবজি চাষে জমির পরিমানও ব্যাপক হারে বেড়েছে।

বিশেষ করে ধরলা, তিস্তা, সানিয়াজান, করতোয়ায় এখন বছরের নয় মাস পানি থাকে না। জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল বালুৃ চর। ওই সব চরে সেচের সুবিধা সৃষ্টি করে বছরে ৯ মাস নানা জাতের সবজিসহ ফসল ফলাচ্ছে কৃষক।

তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও রত্নাই নদীর চরে কৃষক আলু, টমেট, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, পেঁপে, লাউ, মাটিয়া কুমড়া ( মিষ্টি জাতের কুমড়া), ধান, পাট, ধনিয়া, পিঁয়াজ, মরিচ, সরিষা, ভুট্টাসহ নানা ফসল ফলাচ্ছে।

সবজি চাষে চীন, ভারতের পরে বাংলাদেশের স্থান। তরুন কৃষকরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কীটনাশক ব্যবহার না করে অর্গানিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছে। ব্যাপকহারে ফলন হচ্ছে। কৃষক দামও পাচ্ছে। তাই তামাক চাষের আধিক্যতা এ অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশে বিশ্বে সবজি চাষে তৃতীয় স্থানে হলেও এখনো পর্যন্ত জনসংখ্যার তুলনায় সবজি চাষে পিছিয়ে আছে। প্রতিদিন একজন মানুষ ১২০ গ্রাম সবজি খাওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে তার বিপরীতে মাত্র ৮০ গ্রাম সবজি খেয়ে থাকে। এছাড়াও মোট উৎপাদিত সবজির প্রায় ৬০ শতাংশ সংরক্ষনের অভাবে প্রতিবছর নষ্ট হয়ে যায়। ভোক্তার কাছে পৌছায় উৎপাদিত সবজির প্রায় ৪০ শতাংশ।

বাংলাদেশে শুধু নিজেদের দেশের সবজি নয় বিদেশী সবজিও চাষ হচ্ছে। খুচরা বাজারে গেলে চোখে পড়ে হরেক রকমের বিদেশী সবজি। যেমন, লেটুসপাতা, ব্রকলি, ক্যাপসিয়াম, চেরি টমেটো, চাইনিজ ক্যাবেজ প্রভূতি।

রফতানি করা সবজির হচ্ছে আলু, বরবটি, শসা, চিচিঙ্গা, করলা, কাঁকরোল, টমেটো, পেঁপে, বেগুন, ঢেঁড়স, লাউ, কচুর লতা, মিস্টি কুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, পালংশাক, বাঁধাকপি, কাঁচামরিচ, পটোল, শিমের বিচি, কাঁচকলা, কলার ফুল, কচুশাক , কাঁঠালের বিচি ও ডাটা শাক ইত্যাদি।

চরাঞ্চলে সবজি চাষ লালমনিরহাট জেলায় ব্র্যান্ডিং করছে। এমন কোন চর নেই যেখানে সবজি চাষ হচ্ছে না। চরাঞ্চলগুলো একেকটি ছোট ছোট খাদ্যভান্ডারে পরিনত হয়েছে। তবে সবজি চাষের অগ্রগতির সাথে সাথে সবজি বাজারজাতকরন, বিপন ও সংরক্ষনের তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। এখনো পর্যন্ত কৃষকের চেয়ে ফড়িয়া ব্যবসায়িরা সবজিতে বেশী লাভবান হচ্ছে।

লালমনিরহাট কৃষি অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধু ভুষন রায় জানান, চরাঞ্চলে কৃষিতে বিপ্লব ঘটছে। চরাঞ্চলের মানুষজন এখন অর্থনীতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সে দিন বেশী দুরে নয়, চরাঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৭

মন্তব্য করুন: