• ঢাকা

  •  শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

ফিচার

চুক্তি না হওয়ার শঙ্কায় তিস্তা পাড়ে হতাশা

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট সংবাদদাতা

 প্রকাশিত: ১০:২১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

চুক্তি না হওয়ার শঙ্কায় তিস্তা পাড়ে হতাশা

লালমনিরহাট: ‘প্রতিবেশী প্রথম’ এ নীতিতে বিশ্বাসী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে ৪১ বছরের পুরোনো সীমান্ত সমস্যা সমাধান করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ভারত সফরের সময় একই ধরনের ঐতিহাসিক তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি হবে বলে প্রত্যাশা ছিলো। তবে চুক্তিটি ভারতের রাজ্য সরকার পর্যায়ে এসে আটকে যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী এপ্রিল মাসে আবারও ভারত সফরে যেতে পারেন। ওই সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তির প্রত্যাশা করলেও ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে, এবারও তা হচ্ছে না।

তথ্য মতে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আলোচনার টেবিলে না আসায় কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ওই সফরে তিস্তা পানি বণ্টন চুক্তি হবে না। এমন খবরে তিস্তা পাড়ের লোকজনের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে।

তিস্তা পাড়ের কৃষক ও স্কুল শিক্ষক সফিয়ার রহমান জানান, 'শেখ হাসিনার সরকার ভারতের সাথে সফলতা নিয়ে সব চুক্তি করে বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করলেও আজ-কাল করে বছরের পর বছর পার হচ্ছে কিন্তু তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। পানির অভাবে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প থেকে রংপুর ও দিনাজপুরকে বাদ দেয়া হয়েছে। তারপরও পানি সংকট কাটছে না। আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তিস্তার পানি চুক্তির জন্য ? শুনলাম এবারও না কি তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না।'

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৪ সালে এই মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ৬৫ হাজার হেক্টরে সেচ সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেচ দেয়া হয় মাত্র ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে সেচ প্রদান করা হয় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে।

বোরো আবাদের মোক্ষম সময়ে কমান্ড এলাকায় কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা পড়েছে বিপাকে। গত কয়েকদিন আগেও নদীর পানিপ্রবাহ প্রায় আড়াই হাজার কিউসেক থাকলেও তা সোমবার মাত্র ৪০০ কিউসেকে নেমে এসেছে বলে জানা যায়। অথচ তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের জন্য প্রয়োজন ১০ হাজার কিউসেক পানি।

তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ দিন দিন কমতে থাকায় এবার মাত্র ৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে দিনাজপুর ও রংপুরের কমান্ড এলাকা সেচ কার্যক্রম থেকে বাদ দিয়ে শুধু নীলফামারী জেলার ডিমলা, জলঢাকা, নীলফামারী সদর ও কিশোরগঞ্জ উপজেলাকে সেচের আওতায় রাখা হয়েছে।

এর মধ্যে নীলফামারী সদরে ৮০০ হেক্টর, ডিমলা উপজেলার ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ২০০ হেক্টর। তবে উজানের প্রবাাহ পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে সেচের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে জানা গেছে।

কৃষকরা বলছেন, তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প এলাকায় চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ এখনও পুরোদমে শুরু হয়নি। জমি তৈরি থেকে চারা রোপণ এবং আবাদ চলমান পর্যন্ত প্রচুর সেচের প্রয়োজন হয়। এখন তিস্তায় পানি নেই। তাই সেচ প্রকল্পের সেচের আশা বাদ দিয়ে নিজেরা সেচযন্ত্র (স্যালো) ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয়েছে।

ডিমলা উপজেলার নাউতরা ইউনিয়নের সাতজান গ্রামে তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রধান খালের পাশের কৃষক বেলাল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, উজানের প্রবাহ না থাকায় তিস্তা সেচ প্রকল্প আগের মতো পানি দিতে পারে না। ফলে নিজস্ব সেচযন্ত্র দিয়ে এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করতে খরচ হবে ৫ হাজার টাকা।

তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী বলেন, চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে রোববার থেকে সেচ প্রদান শুরু করা হয়। তবে শুরুতে সেচ দেয়া হয়েছে জলঢাকা উপজেলার হরিশচন্দ্র পাট এলাকায়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সেচ প্রদানের চেষ্টা করা হবে।

তিনি বলেন, উজানের প্রবাহ দিন দিন কমে আসায় তিস্তা নদীর পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজের কমান্ড এলাকায় সম্পূরক সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭

মন্তব্য করুন: