• ঢাকা

  •  শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

ফিচার

সুখের পায়রায় সুখী উত্তমা রায়

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট সংবাদদাতা

 প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৬ মার্চ ২০১৭

সুখের পায়রায় সুখী উত্তমা রায়

লালমনিরহাট: যখন ডাকঘর ছিল না তখন মানুষ কবুতরের মাধ্যমে চিঠিপত্র আদান প্রদান করতো। সেই কবুতরের বাক-বাকুম শব্দে মুখর ছিল গ্রাম বাংলার প্রতিটি বাড়ি। এ যান্ত্রিক যুগে সকালে সুখের পায়রা বাক-বাকুম করে ঘুম ভাঙ্গবে এমনটা ভেবে দুই জোড়া দিয়ে কবুতর পালন শুরু করেন  লালমনিরহাট পৌরসভার মাঝাপাড়া এলাকার অরুন কুমার রায়ের স্ত্রী উত্তমা রায়।

উত্তমা রায় জানান, স্বামী-সন্তানরা বাসার বাহিরে গেলে বড় একা হয়ে পড়েন তিনি। সারা দিন সময় কাটানোই ছিল তার বড় কাজ। এক আত্নীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে কবুতর পালন ও কবুতরের বাক-বাকুম শব্দ তাকে আকৃষ্ট করে। সেই থেকে কবুতর পালনে শখ হয় উত্তমা রায়ের। ভোরে বাক-বাকুম শব্দ শুনতে চার'শ টাকায় দুই জোরা কবুতর কিনেন তিনি।

একটি ঘরের ভেতরে লোহা ও বাঁশের খাঁচায় কবুতরের বাসা করে দেন উত্তমা। তিনি বলেন, 'একটু খাদ্য পানি দিয়ে পরিচর্যা করলেই কবুতরে অনেক লাভ করা যায়।' প্রতিনিয়তই বাড়তে থাকে তার শখে কেনা সুখের পায়রা কবুতরের সংখ্যা। মাত্র ৩ বছরের মাথায় তার খামারে কবুতরের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ শতাধিক। মোট ২৮ প্রজাতির কবুতর রয়েছে তার খামারে। সবগুলোই উন্নত জাতের।

সময় কাটানোর পথ খুজতে গিয়ে এখন আর সময়ই মিলে না বিশ্রামের। একা সামলানো দায় তাই তার খামার দেখতে ২ জন নারী শ্রমিক নিয়োগও দিয়েছেন তিনি।

দেশি প্রজাতি দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে প্রায় সবগুলো উন্নত জাতের। এইচ এনজেল, পারভীন, এক্সার, করমনা, গোল্ড সুইচ নামে কিছু দুর্লভ  প্রজাতির কবুতরও রয়েছে এ খামারে। এসব কবুতর খাচাতেই ডিম দিয়ে প্রকৃতিক উপায়ে প্রতি মাসে এক জোড়া করে বাচ্চা দিয়ে আসছে। তার এ খামাড়ে ৩ শত থেকে বার হাজার টাকা দামেরও কবুতর রয়েছে।

দেশী কবুতর ৩ শত টাকা জোড়া বিক্রি হলেও উন্নত জাতের কবুতর ১ হাজার থেকে বার হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন তিনি।

এ খামারের আয় দিয়ে চলছে তিন ছেলে-মেয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ। সময় কাটানোর পাশাপাশি এখন সংসারে বাড়তি আয় করছেন এ কবুতর বিক্রি করে।

কবুতরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করতে কোন ঝামেলা নেই। পাইকাররা খামারে এসে নগদ অর্থে কবুতর কিনে নেয়। উত্তমার কবুতর পালনে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্থানীয় অনেক বেকার নারী কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ খুঁজছে।

প্রতিদিন অনেকেই আসেন কবুতর দেখতে। যারা দেখতে আসেন তাদেরকে কবুতর পালনে উৎসাহ ও নির্দশনাও দেন উত্তমা রায়।

উত্তমা রায় বলেন, সময় কাটানো আর সৌখিনতায় শুরু হলেও এখন আয়ের অন্যতম উৎস হচ্ছে তার এ খামার। নিজের চেষ্টায় শুরু হলেও খামার বড় হলে প্রাণি সম্পদ বিভাগের সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে চলেছেন তিনি। নিজের প্রচেষ্টা আর প্রাণি সম্পদ বিভাগের পরামর্শেই তার এ সাফল্য। অল্প খরচে অধিক মুনাফা পেতে কবুতর পালনের বিকল্প নেই বলেও দাবি করেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. এসএম নাছির উদ্দিন জানান, বাণিজ্যিকভাবে খুব বেশি না হলেও চাহিদা বুঝে ইদানিং অনেকেই ঝুকছেন কবুতর পালনে। ৩ জোড়া কবুতরই একটি সন্তানের স্কুলের পড়ালেখার খরচ যোগান দিবে। তাই গ্রামীন নারীদের কবুতর পালনে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

মার্চ ১৫, ২০১৭

মন্তব্য করুন: