• ঢাকা

  •  বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১৮, ২০২৪

বাংলাদেশ

মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা

ফুলবাড়ীয়া সংবাদদাতা

 প্রকাশিত: ০৪:৫০, ১৬ এপ্রিল ২০১৭

মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা

ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ): অবৈধ সম্পর্কের মিথ্যা অভিযোগে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় গ্রাম্য সালিশে স্বামী-স্ত্রীর মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা পরিয়ে রাখে মাতব্বররা।

বুধবার (১২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টায় রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের হাতিলেইট বিলপাড়া গ্রামে এই বর্বরোচিত ঘটনা ঘটে।

তাছাড়াও শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে সালিশে কয়েস চন্দ্র বর্মণ ও তার স্ত্রী লক্ষ্মী বর্মণকে মারপিট ও তাদের ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করেন মাতব্বররা। আগামী সোমবারের মধ্যে এ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন তারা।

এলাকাবাসী ও পরিবার জানায়, কয়েস চন্দ্র বর্মণ (৩৫) ও লক্ষ্মী রানি বর্মণের (৩০) বড় মেয়ে বৃষ্টি বর্মণ (১০), ছোট মেয়ে বিউটি বর্মণ (৮) প্রতিবন্ধী। পরিবারটি দরিদ্র হলেও তাদের সুখের সংসার। বৃস্পতিবার থেকে পরিবারটিকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। বাড়ি থেকে বের হতে না দেয়ায় মারপিটে অসুস্থ কয়েস বর্মণের চিকিৎসা বাড়িতেই চলছে।

সালিশে প্রকাশ্যে বাবা-মাকে নির্যাতনের সময় তাদের মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী বৃষ্টি বর্মণ হাউমাউ করে কান্নাকাটি করে। তার বাবা-মায়ের চুল না কাটতে অনুরোধ জানালেও কর্ণপাত করেননি মাতব্বররা।

হাতিলেইট বিলপাড়া গ্রামের মান্দাই জনগোষ্ঠীর মিত্র মোহন বর্মণের ছেলে কয়েস বর্মণ প্রায় ১৮ বছর আগে ঘাটাইল উপজেলার ফকির চালা গ্রামে বিয়ে করেন। এক বছর আগে বাক্কুর চালা গ্রামের ইবির আলীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক হয় কয়েস বর্মণের। এ সুবাদে একে অপরের বাড়িতে মাঝে মধ্যেই যাতায়াত করেন। বুধবার দুপুরে লক্ষ্মী রানী বর্মণ ইবির আলীর বাড়িতে বেড়াতে যান। এতে মান্দাই পাড়ার মান্দাই সম্প্রদায়ের মাতব্বররা ক্ষেপে যান। ওইদিন রাতেই চন্দন বর্মণ, রূপচান, নরেন, পাইলট, পরেশ, কালীমোহন বর্মণসহ অন্যান্য মাতব্বররা মিত্র মোহন বর্মণের বাড়িতে সালিশ ডাকেন। সালিশে লক্ষ্মী রানির বিরুদ্ধে ইবির আলীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কের অভিযোগ তোলা হয়।। দীর্ঘ সালিশ বৈঠকে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবুও মাতব্বররা সালিশে এ বর্বরোচিত রায় দেন।

সালিশের এক মাতব্বর নবীন বর্মণ বলেন, পাশের গ্রামের ইবির আলীর সঙ্গে লক্ষ্মী রানির অবৈধ সম্পর্ক থাকার কারণে তার স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়িকে জানিয়েছি। তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমাদের নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিচার এবং জরিমানা করা হয়েছে। সালিশে অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি তাহলে কেন এমন শাস্তি দেয়া হল জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি আমরা শুনেছি।

রাঙ্গামাটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালিনা চৌধুরী পুলিশ প্রশাসনকে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেবার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তিনি এহেন মানবাধিকার লংঘনের তীব্র নিন্দা জানান। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে সর্বাত্মক সহায়াতা প্রদান করবেন বলে আশ্বাস দেন।

তিনি আরো বলেন, ভুক্তভোগী দম্পতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং যে কোন প্রকার হুমকি-ধামকি মোকাবেলায় এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানান।

স্থানীয়দের অভিযোগ সাবেক এক মেম্বারের ইন্ধনে ঘটনাটি ঘটেছে আবার সেই মেম্বারই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ব্যাপক তদবির চালাচ্ছে।

এপ্রিল ১৬, ২০১৭

মন্তব্য করুন: