• ঢাকা

  •  মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

বাংলাদেশ

বর্ষা না আসতেই জমি-বাড়ি ধরলার পেটে

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট সংবাদদাতা

 প্রকাশিত: ০৬:১২, ২১ জুন ২০১৭

বর্ষা না আসতেই জমি-বাড়ি ধরলার পেটে

লালমনিরহাট: বর্ষা শুরুর আগেই শুরু হয়েছে ধরলা নদীর ভাঙ্গন। বিলীন হয়ে যাচ্ছে গাছপালা, ঘরবাড়ি ফসলের ক্ষেত, স্কুল মাদ্রাসা হাটবাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বারবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে অনেকেই হারিয়েছেন মাথাগোজার শেষ সম্বলটুকুও। সরেজমিনে লালমনিরহাট থেকে ধরলার পাড়ের সচিত্র প্রতিবেদনটি পাঠিয়েছেন আসাদুজ্জামান সাজু

আবদার আলী। গত ২ বছর আগে ধরলা নদীর ভাঙ্গনের শিকার হয়ে নিজের শেষ জমিটুকুতে বাড়ি তৈরি করে নতুনভাবে আবার সংসার জীবন শুরু করেছিল। কিন্তু শনিবার (১৭ জুন) রাতে শেষ আশ্রয়স্থলটিও ধরলার ভাঙ্গণে বিলীন হয়ে গেছে। ধরলা নদীর ভাঙ্গনে ৫ বার বসতভিটা হায়িয়ে এখন অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে বাড়ি নির্মাণের চেষ্টা করছেন তিনি।

এই অবস্থা ধরলা পাড়ের অনেকের। বর্ষা মৌসুম না আসতেই লালমনিরহাটে ধরলা নদীর ডান তীরে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার মোঘলহাট ইউনিয়নের কর্ণপুর ব্যাপারীটারী ও ইটাপোতা গ্রামে গত ৭ দিনে ১৯টি বসতবাড়িসহ বেশ কিছু আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।

ধরলা পাড়ের বাসিন্দা সোলেমান আলী, সমসের আলী ও জমির উদ্দিন জানান, ১০ দিন আগে ধরলা নদীর ভাঙ্গন হঠাৎ হিংস্র আকার ধারন করে। বর্ষা না আসতেই নদীর এ ভাঙ্গন দেখে আতংকিত হয়ে পড়েছে ধরলা পাড়ের লোকজন। দিনে ভাঙ্গন কিছুটা কম থাকলেও রাতে তা বৃদ্ধি পায়। যে কারণে নির্ঘুম রাত পার করছে ধরলা পাড়ের মানুষ।

গত দুই দিনে ব্যাপারীটারী গ্রামের নসরুদ্দিন, আবদার আলী, সাইদুল ইসলামের বসতবাড়িসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বিলিন হয়েছে ইটাপো বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের কিছু অংশও। ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে ব্যাপারীটারী বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বসতবাড়ি।

বর্ষা আসার আগে ভাঙ্গন রোধ করা না গেলে ইটাপোতা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ, শীবেরকুটি বাজার, বডার গার্ড (বিজিবি) ক্যাম্প, মোঘলহাট বাজার, মোঘলহাট রেলস্টেশন, লালমনিরহাট মোঘলহাট সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে বলে আশংকা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও স্থানীয়রা।

জরুরীভিত্তিতে সিসি ব্লক তৈরী করে ভাঙ্গন রোধ করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) আপাতকালীন সময়ের জন্য একটি প্রকল্প চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করেছেন। যা পরিকল্পনা বিভাগে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। নদী ভাঙ্গনের শিকার পরিবারগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কেউ কেউ রাস্তার ধারে ঘরসহ মালামাল রাখছেন। আবার কেউ অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে ঘর তৈরির চেষ্টা করছেন।

ঘরবাড়ি সরিয়ে রাস্তার পাশে আশ্রয় নেওয়া আবদার আলী জানান, ধরলার কড়াল গ্রাসে ৫ বার বসতবাড়ি সরাতে হয়েছে। গতবছর ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ভাড়ায় নেয়া চার শতাংশ জমিতে ঘর করে পরিবার পরিজন নিয়ে দিনমজুরী করে সংসার চালিয়েছেন। তার সেই বসত বাড়িও গতরাতে নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে।
 
ভাঙ্গনের মুখে পড়া হাড্ডু মিয়া জানান, গত বছর ভাঙ্গনের কবলে পড়লেও কোনরূপ সহযোগিতা পান নি। এ বছরও যেকোন সময় নদীগর্ভে বিলিন হবে তার বসতভিটা। তাই দ্রুত নদীভাঙ্গন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

খেয়াঘাটের মাঝি আবুল কাশেম বলেন, গত সপ্তাহে নদীটি অনেক দুরে ছিল। অস্বাভাবিক ভাঙ্গনে সব কিছুই গিলে খাচ্ছে ধরলা নদী। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তিনিও জোর দাবি জানান।

মোঘলহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, বর্ষা না আসতে এমন ভাঙ্গনে আতংকিত হয়ে পড়েছে ধরলার পাড়ের মানুষ। কয়েকদিনে বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও ফসলের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে ইটাপোতা বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ। ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পাউবোসহ সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে।
 
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকার জানান, ব্যাপারীটারী এলাকায় চলতি অর্থবছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যায়ে দেড় লাখ সিসি ব্লক দিয়ে আধা কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ওই বাঁধের ভাটিতে প্রায় সাড়ে ৪শত মিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন রোধকল্পে এরই মধ্যে আপাতকালীন সময়ের একটি প্রকল্প চেয়ে উর্দ্ধতন মহলে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বরাদ্ধ এলেই দ্রুত কাজ করা হবে।

জুন ২১, ২০১৭

মন্তব্য করুন: