• ঢাকা

  •  শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

বাংলাদেশ

শিকলে বন্ধী সাইফুলের জীবন!

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট সংবাদদাতা

 প্রকাশিত: ১২:৫২, ২২ জুলাই ২০১৭

শিকলে বন্ধী সাইফুলের জীবন!

লালমনিরহাট: সাইফুল ইসলাম। বয়স প্রায় ১০ বছর। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী সাইফুলকে দুই বছর ধরে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার।

পায়ে শিকল থাকার কারণে দুই পা লাফিয়ে লাফিয়ে কষ্ট করে চলাচল করতে হয় সাইফুল ইসলামকে। চোঁখের সামনে প্রতিনিয়ত ছেলের এমন কষ্ট দেখেও অনেকটা বাধ্য হয়েই মেনে নিচ্ছে সাইফুলের বাবা মা।

সাইফুল ইসলাম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বারাপাড়া গ্রামের আশরাফুল ইসলাম ও ছালেহা বেগম দম্পতির ছেলে।

সাইফুলের মা ছালেহা বেগম বলেন, জন্মের ২ বছর পর খেলতে গিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পায় ইসলাম। ওই সময় তার মাথায় সমস্যা দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা হলেও সুস্থ্য হয়ে উঠেনি সাইফুল। চিকিৎসা করতে গিয়ে সবকিছু বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে যায় আশরাফুল ইসলাম ও ছালেহা বেগম দম্পতি। ফলে বন্ধ হয়ে যায় সাইফুল ইসলামের চিকিৎসা। সাইফুল মুহুর্ত্বেই বাড়ি থেকে যে দিকো চোঁখ যায়; চলে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে তার দুই পায়ে শিকল বেঁধে ঘরের ভিতরে আটকিয়ে রাখা হয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া তাকে বাইরে বের করা হয় না।  

সাইফুল ইসলামের চাচা জিয়া ইসলাম বলেন, যতই অসুস্থ্য বা পাগল হোক, ছেলে তো আমাদের, তার প্রতি মায়া আছে। তাকে না দেখলে তার বাবা-মা ও আমাদের রাতে ঘুম আসে না। মানসিক প্রতিবন্ধী সাইফুল ইসলাম যাতে বেশী দূরে যেতে না পারে। বেশী দূর গেলে হারিয়ে যাওয়ার ভয় থাকেই। সেই কারণেই তার পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। এর আগে সাইফুল ইসলাম একাধিকবার হারিয়ে গিয়েছিল। কয়েকদিন মাইকিং করে তার খোঁজ পাওয়া যায়। এরপর থেকেই তার পায়ে শিকল পড়িয়ে রাখা হয়েছে।

ওই এলাকার ইউপি সদস্য আব্দুল মজিদ জানান, সাইফুল ইসলাম তার নিজের নাম, বাবা-মায়ের নামসহ অনেক কিছুই বলতে পারে। শিশুটির সঠিক চিকিৎসা করানো হলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এ বছর প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য তার নাম তালিকায় পাঠানো হয়েছে। সাইফুলের বাবা আশরাফুল ইসলাম নিজেও একজন প্রতিবন্ধী।

আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কাশেম আলী বলেন, একটি শিশুর পায়ে সবসময় শেকল পড়িয়ে রাখা খুবই অমানবিক কাজ। তবে যতটুকু পারা যায় তাকে চোখে চোখে রাখতে হবে।

আদিতমারী উপজেলার ইউএনও আসাদুজ্জামান জানান, শিশুকে শেকল পড়িয়ে রাখা খুবই দুঃখজনক। তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে চিকিৎসা করানো উচিত। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে চেষ্টা করা হবে।

জুলাই ২২, ২০১৭

মন্তব্য করুন: