• ঢাকা

  •  শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

বাংলাদেশ

জয়িতা রেজিয়ার পথ চলা

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট সংবাদদাতা

 প্রকাশিত: ১৩:২৯, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭

জয়িতা রেজিয়ার পথ চলা

লালমনিরহাট: বাঁধা আর প্রতিকূলতা কোনটাই আটকাতে পারেনি কিশোরী রেজিয়াকে। এ জন্যেই এলাকার অন্যদের থেকে একটু আলাদা কিশোরী রেজিয়া খাতুন (১৭)।

বাবার মৃত্যুর পর তার বাল্য বিবাহ রোধ করে স্কুলে যেতে শুরু করে রেজিয়া। সংগ্রামী রেজিয়া হিসেবেই এলাকায় তার পরিচিতি। আর এ কারণে সম্প্রতি উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর তাকে জয়িতার পুরস্কার প্রদান করে।

সে উত্তর তালুক পলাশী গ্রামে নানীর বাড়িতে থেকে আদিতমারী উপজেলার পলাশী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীতে পড়ছে।

কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের শুকানদীঘি গ্রামের আছিমুদ্দীনের মেয়ে রেজিয়া। ২ ভাই ও ৪ বোনের মধ্যে পঞ্চম। ১৩ বছর পূর্বে তার দিনমজুর বাবা মারা যায়। জমিজমা বলতে মাত্র ৫ শতক ভিটেমাটি। বাবার মৃত্যুর পর রেজিয়ার আশ্রয় হয় নানী লতিফুন নেছার বাড়িতে। নানী অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার ও তার  লেখাপড়ার খরচ বহন করতো। শত কষ্টের মাঝেও চলছিল তার লেখাপড়া। হঠাৎ করে রেজিয়ার মা সাহিদা খাতুন তার বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু বাঁধ সাধেন কিশোরী মেয়েটি। সাফ মাকে জানিয়ে দেয়, এ বিয়ে করবে না সে। লেখাপড়া শিখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। কিন্তু রেজিয়ার মা এ বিয়ে জোর করে হলেও দিবেন। এ ঘটনার পর রেজিয়া বাল্য বিয়ে থেকে রেহাই পেতে কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় বোনের বাসায় চলে যায়। যাওয়ার আগে রেজিয়া একটি চিঠিতে 'নানী তুমি চিন্তা করনা, আমি ভাল আছি। আমি আমার মায়ের চাপে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। বাড়িতে থাকলে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিত। আমি আত্মহত্যা  করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেটি মহাপাপ জেনে তা করিনি।' লিখে যায়।

আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ ঘটনাটি জানার পর সংগঠনটি রেজিয়ার পাশে এসে দাঁড়ায়। তাদের হস্তক্ষেপে কিশোরী মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপর সংগঠনটির পক্ষ থেকে রেজিয়াকে মাসিক ৫শ টাকা করে শিক্ষাবৃত্তি ও ব্যবসার জন্য ১৮ হাজার টাকা প্রদান করা হয়।

তারপর, নিজে স্কুল ছাত্রী হয়েও গ্রামে শুরু করে প্রাইভেট পড়ানো। ইসলামিক রিলিফ বাংলাদেশ থেকে পাওয়া ১৮ হাজার টাকা দিয়ে নানীর বাড়ির পার্শ্বের একটি পুকুরে মাছ চাষ, দু’টি ছাগল ক্রয় এবং হাঁস- মুরগী পালন ও সবজি চাষ শুরু করেছে। এখান থেকে যে আয় হয়, তা দিয়ে নানী-নাতনির সংসার কোন রকম চলে যাচ্ছে।

রেজিয়ার নানী লতিফুন নেছা জানান, 'রেজিয়া মোর নাতনী নয়, এটা মোর ছাওয়া। মুই ভিক্ষা করি হইলেও ইয়াক পড়া পড়াইম।'

তিনি রেজিয়ার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

জানুয়ারি ১৮, ২০১৭

মন্তব্য করুন: