• ঢাকা

  •  মঙ্গলবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৪

বাংলাদেশ

এই গেইটে কোনো গেইটম্যান নাই...

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট সংবাদদাতা

 প্রকাশিত: ০৭:৩৮, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এই গেইটে কোনো গেইটম্যান নাই...

লালমনিরহাট: সাবধান ‘এই গেইটে কোনো গেইট ম্যান নাই। পথচারী ও সকল প্রকার যানবাহনের চালক নিজ দায়িত্বে পারাপার করিবেন এবং যেকোনো রূপ দুর্ঘটনার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে নিজে বাধ্য থাকিবেন’। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল লালমনিরহাট বিভাগের ৫৪০ কিলোমিটার রেল পথে ক্রসিংগুলোতে এ রকম দায়সারা সতর্কবানী দিয়ে দায় সেরেছে রেলওয়ে।

অরক্ষিত ওইসব ক্রসিংয়ে কোনো গেইট ও গেইটম্যান না থাকায় প্রতিনিয়ন ঘটছে দুর্ঘটনা। পথচারী ও চালকরাই তাদের জীবন দিয়ে যেন এর ক্ষতিপূরণ দিয়ে চলছেন।

প্রতিবছরই এই রেলক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে অনেককেই জীবন দিতে হচ্ছে। অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বরণ করেছে পঙ্গুত্ব।

সুত্র মতে, রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল লালমনিরহাট বিভাগের অধীনে উত্তরের ৮ জেলায় ৫২৫টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে প্রায় ৩০৫টিই অরক্ষিত। তার মধ্যে লালমনিরহাটে ২৫টি, কুড়িগ্রামে ৩০, রংপুরে ৪৫, বগুড়ায় ৫৫, দিনাজপুরে ৫২, গাইবান্ধায় ৩৬, ঠাকুরগাঁওয়ে ২৫ ও পঞ্চগড়ে ৩৭ টি।

২২০টি নিরাপদ ক্রসিংয়ের মধ্যে ৮৫টি চলছে রেলওয়ের নিয়মিত স্টাফ দিয়ে আর বাকি ১৩৫টি চলছে দিনমজুরী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া অদক্ষ জনবল দিয়ে।

লালমনিরহাট রেলওয়ের অন্য একটি সুত্র মতে, ৫২৫টি ক্রসিংয়ের মধ্যে ১০২টিই অবৈধ। কারণ এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ রেলওয়ের অনুমতি না নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করে এসব ক্রসিং তৈরী করেছে। এসব অবৈধ ক্রসিংয়ের সকল দায়দায়িত্ব তাদের উপরই বর্তায়। এ জন্য রেলওয়ে দায়ী নয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের সুত্র মতে, সারা দেশে রেল নেটওয়ার্কে ২ হাজার ৫৪১টি লেভেল ক্রসিং আছে। যার মধ্যে অনুমোদিত ক্রসিংয়ের সংখ্যা মাত্র ৭৮০টি। বাকি ১ হাজার ৭৬১টিই অনুমোদনহীন। আবার ৭৮০টি অনুমোদিত ক্রসিংয়ের মধ্যে মাত্র ২৪২টিতে রক্ষী বা গেইটকিপার আছে। ৫৩৮টি অনুমোদিত ক্রসিংয়ে রক্ষী বা গেইটকিপার নেই। আনম্যান হিসেবে রয়েছে ২ হাজার ২৯৯টি লেভেল ক্রসিং।

প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটার রেলপথে যে কোনো স্থানে অনুমোদন না নিয়েই লেভেল ক্রসিং বানাচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণ। আর এতে অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সায়ও রয়েছে। আর এ নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। আর এসব কারণে সবগুলো লেভেল ক্রসিংয়ে রক্ষী দেয়া সম্ভব হয় না।

রেল দুর্ঘটনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বলেন, অনেক ক্রসিংয়ে গেট তৈরী কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে আরও হবে। তবে মূলত তিন কারণে রেল দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এরমধ্যে লেভেল ক্রসিংগুলোতে দুর্ঘটনার হার অনেক। দুর্ঘটনা মূলত চালকদের অসতর্কতার কারণে হয়ে থাকে। এ ছাড়াও পয়েন্ট সিগন্যাল লাইনে ত্রুটি ও উন্নয়ন কাজ চলা অবস্থায় ট্রেন লুপ লাইন কিংবা সাইড লাইনে গেলে অনেক সময় লাইনচ্যুতির ঘটনা ঘটে। এছাড়া রয়েছে হিউম্যান ফেইলিওর। অর্থাৎ রেলওয়ের সিগন্যাল ও গার্ডসহ নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের অসতর্কতা কিংবা অবহেলার কারণেও রেল দুর্ঘটনা ঘটছে।

ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭

মন্তব্য করুন: