• ঢাকা

  •  শুক্রবার, মার্চ ২৯, ২০২৪

বাংলাদেশ

বুড়িমারী স্থলবন্দরে 'শ্রমিক পিলখানা'য় মন্দাভাব

আসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট সংবাদদাতা

 প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১৮ মে ২০১৭

বুড়িমারী স্থলবন্দরে 'শ্রমিক পিলখানা'য় মন্দাভাব

লালমনিরহাট: জাবেদ আলী একজন পাথর শ্রমিক। ৩ ছেলে ২ মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে ৭ সদস্যের সংসার তার। ২ ছেলে ও ২ মেয়ে লেখাপড়া করেন। জাবেদ আলীর আয় দিয়ে চলে পুরো সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ। তার এক দিন কাজ না মিললে সংসারের প্রতিদিনের খরচ নিয়ে দুচিন্তায় পড়তে হয়।

জাবেদ আলীর বাড়ি লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাশে উপারমারী এলাকায়। জাবেদ আলীর মতো জীবণ জীবিকার এ অবস্থা বুড়িমারী স্থলবন্দরের হাজার হাজার শ্রমিকের। তাদের একদিন কাজ না জুটলে ঋণ করে সাংসার চালাতে হয়। অনেকেই আবার না খেয়েই পার করে দেয় রাত।

এই চিত্র বুড়িমারী স্থলবন্দরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সিরিয়াল অফিসে। যা শ্রমিক পিলখানা নামে পরিচিত।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের পাথর শ্রমিক আসাদুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে শ্রমিক পিলখানায় কাজের খোঁজে আসি। অনেকদিন দুপুরের পর কাজ মেলে। যেদিন কম ট্রাক স্থলবন্দরে প্রবেশ করে সেদিন অনেক শ্রমিকেই কাজ পায় না। যে সব শ্রমিক কাজ পায় না তাদের সেই দিনের সংসার নিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। হরতাল বা অবরোধ বা অন্য কারণে স্থলবন্দর বন্ধ থাকলে আমাদের সেদিন বাকিতে বা দেনা করে সংসার চালাতে হয়। তবে আমরা জীবনের ঝুকি নিয়ে কাজ করলেও আমাদের ন্যায্য মজুরী দেওয়া হয় না।

বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি সফর আলী বলেন, শ্রমিকদের স্বার্থে এ স্থলবন্দরে গড়ে উঠেছে বুড়িমারী স্থলবন্দর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন। সংগঠনটি স্থানীয়ভাবে শ্রমিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করছে। ওই সব শ্রমিকরা কাজের সন্ধানে যে স্থানে প্রতিদিন জড়ো হয় তা স্থানীয়ভাবে শ্রমিক পিলখানা নামে পরিচিত। ওই পিলখানার মাধ্যমেই ওইসব শ্রমিকদের কাজ বন্টন করা হয়। শ্রমিক পিলখানায় শ্রমিকদের একটি তালিকা রয়েছে। ওই তালিকা অনুসারে প্রতিদিন শ্রমিকদের কাজ বন্টন করে দেয়া হয়। একটি ভারতীয় বা বাংলাদেশী ট্রাক স্থলবন্দরে প্রবেশ করলে প্রথমে শ্রমিক পিলখানার সামনে আসবে। পিলখানার তালিকাভুক্ত শ্রমিকদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রমিক ট্রাকের মালামাল ওঠানামার কাজ করে থাকেন। এভাবেই প্রতিনিয়ত চলে আমাদের কাজ। এত শ্রমিকের মাঝেও রয়েছে কাজের শৃঙ্খলা।

ওই শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক তহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের শ্রমিক পিলখানায় ৯৮টি গ্রুপ রয়েছে। প্রতি গ্রুপে ১৬ জন করে মোট ১ হাজার ৫ শত ৬৮ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রত্যেক শ্রমিককে প্রতিদিন কাজ দেয়ার চেষ্টা করা হয়। প্রত্যেক শ্রমিক কাজের ভিত্তিতে দৈনিক ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন। শ্রমিকদের কাজের তালিকা নিয়ন্ত্রণ করতে একজন লাইনম্যান রয়েছে।

স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, শ্রমিকদের একটি তালিকার মাধ্যমে সিরিয়াল অনুসারে কাজ বন্টন করায় আমাদের ব্যবসায়ীদের শ্রমিক ঝামেলায় পড়তে হয় না। আমরা যখন প্রয়োজন তখনেই চাহিদা মোতাবেক শ্রমিক পাই।

বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথরের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কয়েক হাজার শ্রমিক জড়িত। এসব শ্রমিক তাদের ন্যায্য মজুরী থেকে বঞ্চিত। এছাড়াও তারা মরণব্যাধি সিলোকোসিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ রোগের ঝুঁকিতেও তারা পেটের দায়ে কাজ করছে। এসব শ্রমিকের মাস্ক ব্যবহার করে কাজ করার জন্য সচেতন করতে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।

মে ১৭, ২০১৭

মন্তব্য করুন: