বন্যায় সহজ যোগাযোগের জন্য পদ্মাসেতু আশীর্বাদ হবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ঢাকা: পদ্মাসেতু বন্যার এই প্রেক্ষাপটে সহজ যোগাযোগে জাতির জন্য একটি আশীর্বাদ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘২৫ তারিখে পদ্মাসেতু আমরা উদ্বোধন করবো ইনশাল্লাহ এবং এই উদ্বোধনের পরে এটাও আল্লাহর একটা আশীর্বাদ হবে। কেননা, দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগটা আমরা অব্যাহত রাখতে পারবো।’
রবিবার (১৯ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াক্ষেত্রে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনা ক্রীড়াবিদদের মাঝে সম্মাননার চেক বিতরণকালে দেয়া ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি মনেকরি, পদ্মাসেতু এমন একটা সময় উদ্বোধন করতে যাচ্ছি সে সময় বন্যা শুরু হয়ে গেছে এবং এই বন্যা কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলেও যাবে। সে সময় পণ্য পরিবহন, বন্যা মোকাবৈলা, বন্যার সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদেরকে সহযোগিতা করার একটা বিরাট সুযোগ আমাদের আসবে। বন্যার্তদের রিলিফ দেয়া থেকে ওষুধ সরবরাহ এবং খাদ্য সরবরাহের বিষয়টি আরো সহজতর হবে।
’৮৮ সালের বন্যায় গোপালগঞ্জে আটকা পড়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তখন এরকম পদ্মাসেতু থাকলে সহজেই চলে আসা সম্ভব হতো।
তিনি ’৯৮ সালে বাংলাদেশের সব থেকে ভয়াবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ঠিক সেই বন্যার আগেই আমরা যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু যমুনাসেতু উদ্বোধন করেছিলাম। আর সেটা করেছিলাম বলেই উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহনসহ সকল কাজের সুবিধা হয়।
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির প্রতিনিয়ত খবর রাখছেন এবং এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় তার সরকারের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একদিকে যেমন করোনার প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে অপরদিকে সিলেট এবং সুনামগঞ্জে ব্যাপক বন্যা হয়েছে। এবারের বন্যাটা একটু বেশিই ব্যাপক হারে এসেছে।
বন্যায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চলমান রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশাসন সেনাবাহিনী নৌ বাহিনী বিমান বাহিনী থেকে শুরু করে সকল প্রতিষ্ঠান বন্যার্ত মানুষকে উদ্ধার করা, তাদের ত্রাণ দেয়া থেকে শুরু করে সব সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। সেইসাথে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ-সহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও বিভিন্ন এলাকায় সহযোগিতা করছেন। খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে উদ্ধার কাজে অংশ নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি স্যালাইনের ব্যবস্থা, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ অন্যান্য যা যা দরকার হতে পারে তার জন্য প্রস্তুতিও সরকার নিয়েছে।
পানি নামার সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায় দেশের বন্যার এই চিত্র ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জ থেকে এই পানি আজ একটু নামতে শুরু করেছে। কিন্তু পানি যখন নামবে, তখন অন্যান্য অঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করবে। এটা আমাদের প্রাকৃতিক নিয়ম। কাজেই আমাদের বিশেষ করে ময়মনসিংহ বিভাগ, রংপুর বিভাগেও বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। সেটা আগে থেকেই সতর্কতা আমরা নিচ্ছি এবং সেই ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য যা যা করনীয় আমরা সেটাও করে যাচ্ছি।
সিলেট সুনামগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় বন্যার কারণে সারাদেশের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করার কথাও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
১০/১২ বছর পরপর দেশে বড় আকারের একটা বন্যা দেখা দেয় বলে তার অতীত অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, সবাইকে অনেক আগে থেকেই সতর্ক করেছিলাম, আমাদের সরকারের যারা তাদের সবাইকে বলেছিলাম, এবারে বন্যাটা একটু বৃহৎ আকারে আসবে। কাজেই সবাইকে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। কাজেই আমাদের প্রস্তুতিও আছে।
তিনি বলেন, আবার এই পানি যখন নামবে কোন না কোন অঞ্চল যখন প্লাবিত হবে। ঠিক শ্রাবণ মাস পর্যন্ত থাকবে আবার শ্রাবণ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হবে। বাংলাদেশের যদি আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশটা দীর্ঘদিন থেকে দেখি এটাই হচ্ছে নিয়ম, এটা হবে। যখন এ রকম বন্যা আসে পানি এভাবে প্লাবিত করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাই মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা তার সরকার নিচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম খরস্রোতা নদী পদ্মায় সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আসা নানা বাঁধা সফলভাবে মোকাবেলা করার কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, অনেকটা নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েই বলেছি, আমরা নিজেদের টাকায় এই সেতু করবো। অর্থাৎ বাংলাদেশ যে পারে, কারো কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা চেয়ে নয়, নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করতে, সেটা আমরা করে দেখিয়েছি। কাজেই আমরা মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে চলবো। কারণ, আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা বিজয়ী জাতি এবং বিজয়ী জাতি হিসেবেই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো।
জুন ১৯, ২০২২
এসবিডি/এবি/
মন্তব্য করুন: