সাংবাদিকদের আয়কর কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে: হাইকোর্ট
ঢাকা: ঢাকা: সংবাদপত্র ও সংবাদসংস্থায় কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের নবম ওয়েজ বোর্ডের গ্র্যাচুইটি ও আয়কর সংক্রান্ত মস্ত্রিসভার সুপারিশ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আয়কর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা দেবেন বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রবিবার (৬ নভেম্বর) বিচারপতি মোঃ আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোঃ সোহরাওর্দীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এর ফলে সাংবাদিক ও কর্মচারীদের আয়কর আগের মতোই কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে।
আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী আকতার হামিদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
আইনজীবী দিদারুল আলম দিদার সংবাদমাধ্যমকে জানান, নবম ওয়েজবোর্ড অনুসারে সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং সংবাদমাধ্যম অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের আয়কর দেবেন প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। আজ হাইকোর্ট এই রায় দিয়েছেন।
একইসঙ্গে আয়কর এবং গ্রাচুইটির বিষয়ে মন্ত্রীসভার কমিটির সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। পাশাপাশি বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি নবম ওয়েজ বোর্ডে যে সুপারিশ করেছে তা বহাল থাকবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন আদালত।
আইনজীবী জানান, ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নবম ওয়েজবোর্ড গেজেট প্রকাশ হয়। ওই ওয়েজ বোর্ডে দেখা যায়, বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি যে সুপারিশ করেছে তার শেষে মন্ত্রীসভা কমিটি দুটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে। শর্তের মধ্যে ছিল সাংবাদিকদের আয়কর যার যারটা সে সে দেবেন। আর গ্রাচুইটি দুটির স্থলে একটি পাবেন।
মন্ত্রীসভার এই শর্তের বিধান চ্যালেঞ্জ করে বাসস এমপ্লোয়িজ ইউনিয়নের সেক্রেটারি মাহবুবুজ্জামান ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২৫ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে আজ রুলটি যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেন আদালত।
২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. নিজামুল হককে প্রধান করে ১৩ সদস্যের নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়। বিচারপতি নিজামুলহক ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কাছে সংবাদকর্মীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করে তাদের প্রতিবেদন জমা দেন।
এরপর, ২০১৯ সালের ২১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে, নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। এর আহ্বায়ক করা হয় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে। যাচাই-বাছাইয়ের পর ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নবম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণা করে সরকার।
সে প্রজ্ঞাপনের সপ্তম অধ্যায়ের ৩ নম্বর শর্তে বলা আছে, “সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীদের বেতনের ওপর আরোপিত আয়কর সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদেয় হবে।”
একই অধ্যায়ের ৭ নম্বর শর্তে বলা হয়েছে, “সকল শ্রেণির সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থার কর্মরত সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক এবং প্রশাসনিক কর্মচারীরা প্রত্যেক বছরে অথবা তার অংশ বিশেষ ছয় মাস বা এর অধিক সময় চাকরির জন্য সর্বেশেষ প্রাপ্ত বেতনের ভিত্তিতে নির্ধারিত দুই মাসের মূল বেতনের সম পরিমাণ অর্থ গ্র্যাচুইটি হিসেবে প্রাপ্য হবেন।”
প্রজ্ঞাপনের ‘সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, কার্যকরণ ও প্রয়োগ’ শিরোনামের দ্বাদশ অধ্যায়ের ৪ নম্বর শর্তে মন্ত্রিসভা কমিটির সুপারিশ তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিক, কর্মচারীদের নিজেদের আয় থেকে আয়কর পরিশোধ করবেন এবং বছরে মূল বেতনের সমান একটি গ্র্যাচুইটি পাবেন।
নবম ওয়েজবোর্ডের মন্ত্রিসভা কমিটির এই সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুজ্জামান। তখন রিটটির প্রাথমিক শুনানির পর ২৫ নভেম্বর আদালত রুল জারি করেন। সে রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর সুপারিশ দুটিকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
নভেম্বর ৭, ২০২২
এসবিডি/এবি/
মন্তব্য করুন: