সমিতি থেকে ‘৫০-৬০ হাজার টাকা কিস্তি তুলে রিকশার মালিক’
ছবি: সংগৃহীত
‘সমিতি থেকে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা কিস্তি তুলে তারা (চালকেরা) রিকশা কিনে নেয়। এ ছাড়া কি তাদের কোনো চাকরি আছে, তাদের কোনো কর্মস্থান আছে?’, বলছিলেন রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরের ব্যাটারিচালিত রিকশা কারখানার মালিক মোহাম্মদ জসিম।
তিনি বলেন, একেকটিকে রিকশা বানাতে খরচ হয় ৬০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত। আর প্রতিদিন এসব রিকশার ভাড়া ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায়। অল্প পুঁজিতে আয় বেশি থাকায় সবাই ঝুঁকছেন এসব রিকশার দিকে।
কথা বলে জানা যায়, সাইকেল আর মোটরসাইকেলের যন্ত্র আমদানি করে সেগুলো দিয়ে অবৈধভাবে বানানো হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। রাজধানীর মিরপুরসহ ৫ জায়গায় দেড় শতাধিক কারখানায় প্রকাশ্যে তৈরি হচ্ছে এসব রিকশা। আইনের তােয়াক্কা না করেই দেদারছে এসব রিকশা চলছে রাজধানীর বুকে।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, রাস্তায় চলাচলকারী অটোরিকশায় বিচ্ছিন্নভাবে অভিযান না চালিয়ে কারখানাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হোক। তাহলে রিকশার আগ্রাসন যদি কিছুটা কমানো যায়।
তারা বলছেন, নব্বইয়ের দশকেও রাজধানীর যেসব রাস্তায় রিকশা নিষেধ ছিল, ৫ আগস্টের পর থেকে এসব রাস্তায় রিকশা অবাধে চলছে। এগুলোর জন্য রাস্তায় যানজট চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। ট্রাফিক পুলিশকে মানছে না তারা। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়া থেকে শুরু করে হেনস্তা করতেও ছাড়ছে না রিকশাচালকরা।
রূপনগরের ব্যাটারিচালিত রিকশার এক কারখানা মালিক জানান, সাইকেলের বিভিন্ন যন্ত্র, চায়না ব্যাটারি ও সাইকেলের মোটর দিয়ে তৈরি করা হয় এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার তৈরির বড় জায়গা কামরাঙ্গীরচর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী ও খিলগাঁও। এসব এলাকাতেই পুরানো রিকশার নিচে ব্যাটারি বসিয়ে এসব ঝুঁকিপূর্ণ যান তৈরি করা হয়।
ঢাকা অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘যে মালিক এই অবৈধ যানটি তার গ্যারেজে রাখল, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অপরদিকে, সাইকেল পার্টস (যন্ত্র) কিংবা মোটরসাইকেলের পার্টসের ঘোষণা দিয়ে যে আমদানি প্রতিষ্ঠান এসমস্ত যন্ত্রাংশগুলা আমদানি করে বেআইনিভাবে গাড়িগুলাে তৈরি করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
অনেকে বলছেন সড়কে ধরপাকড় না করে কারখানাগুলোতে অভিযান চালানো উচিত। আবার অনেকের পরামর্শ, রাস্তায় অবৈধ সব ব্যাটারিচালিত রিকশা ধরে ডাম্পিং করা উচিত। নগরীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে রিকশা বন্ধ করা ছাড়া বিকল্প নেই।
সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে অন্তত আট লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। আর এসব রিকশা পৃষ্টপোষকতা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন।
বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ হাদিউজ্জামান একটি টেলিভিশনকে বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো অংশীজন ও স্টেকহোল্ডার আছে, সবাই আসলে যদি সচেতনভাবে কাজ না করে এবং পরিকল্পনা যদি দীর্ঘ মেয়াদি না হয় তাহলে এইটা সমাধান হবে না। আমরা দেখছি সমস্যা যখন জটিল হয়ে যাচ্ছে তখন আমরা এইটা নিয়া কথা বলছি, কিন্তু ততক্ষণে কিন্তু এইটা আমাদের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।’
অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্য বলছে, ঢাকায় প্রতিদিন অন্তত এক হাজার ব্যাটারিচালিত নতুন রিকশা তৈরি হচ্ছে। সূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি
এসবিডি/এবি
মন্তব্য করুন: