দুই বছরেও শেষ হয়নি ১ কিলোমিটার রাস্তার কাজ
লালমনিরহাট: এক কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজ চলছে ২ বছর ধরে, তবু কাজ শেষ করতে পাচ্ছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এতে পথচারীদের দুভোর্গ বেড়েই চলছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) বলছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজের মান ঠিক রাখতে ও কাজের গতি বাড়াতে ২ বছরে ৫ বার চিঠি দেয়া হলেও কোনো কাজই হচ্ছে না।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানা গেছে, উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের সিঁন্দুরমতি এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের পুণ্যস্নানে আসতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। ওই ইউনিয়নের বাবুর কালীরপাঠ থেকে সিঁন্দুরমতি বাজার পর্যন্ত গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ১ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার জন্য গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ৫৬ লাখ ৫৭ হাজার ১৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজটি বাস্তবায়নে দরপত্র আহ্বান করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
দরপত্র অনুযায়ী সর্বোচ্চ কমিশনে ৫২ লাখ এক হাজার ৫০৮ টাকায় কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হন কুড়িগ্রামের মোস্তফা ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। শুরুতে নিম্নমানের কাজের অভিযোগে সতর্ক করে দিয়ে নিম্নমানের ইট বালু সড়িয়ে দেয় প্রকৌশল বিভাগ। পুনরায় নিম্নমানের কাজের অভিযোগে উচ্চতর তদন্ত টিম কাজটি পরিদর্শন করেন। এভাবে শেষ হয় চুক্তিকালীন ১ বছর মেয়াদ। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ রেখে আরো এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে নেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মেয়াদ অনুযায়ী চলতি বছরের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি।
এলাকার লোকজন জানান, রাস্তা কেটে কয়েক মাস ফেলে রাখা হয়। এরপর নিম্নমানের বড় বড় খোয়া ও বালুর পরিবর্তে কাদামাটি ফেলে রোলার না দিয়ে কয়েক মাস ফেলে রাখা হয়। রাস্তায় ব্যবহৃত খোয়া পা দিয়ে চেপে ধরলে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
দ্রুত রাস্তার কাজ শেষ করে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে লালমনিরহাটের এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জামের ৭০ ভাগই নিম্নমানের। কিন্তু ঠিকাদার বাইরের জেলার হওয়ায় তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তারা।
পঞ্চগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন জানান, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নির্মাণকাজে শুধু ধীরগতিই নয়, কাজের মান একেবারেই নিম্নমানের। এ বিষয়ে উপজেলা সমন্বয় কমিটিতে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির প্রোপাইটার গোলাম মোস্তফা জানান, তদন্ত করে যতটুকু কাজ পাবে, ততটুকু বিল নেওয়া হবে। বর্ধিত মেয়াদের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ এবং কাজের মান সঠিক রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলা প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, জনদুর্ভোগ লাঘবে কাজের মান ও গতি বাড়াতে ঠিকাদারকে ৫ বার চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ কমিশনে কাজ নেওয়ার পরও যেন লোকসান না হয় সেজন্য ঠিকাদার এমন গড়িমসি করছেন। এখন পর্যন্ত অর্ধেক বিল দেওয়া বাকী রয়েছে। তবে কাজ বুঝে না নিয়ে বাকী বিল দেওয়া হবে না।
এপ্রিল ২২, ২০১৮
মন্তব্য করুন: