দিনদুপুরে ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা
নোয়াখালী শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় এলাকাবাসী একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে।
বুধবার (১৪ জুন) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গুপ্তাংকের বার্লিংটন মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন, ফজলে আজিম কচি মিয়ার স্ত্রী নূর নাহার বেগম (৪৫) ও তার এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে ফাতেমা আজিম প্রিয়ন্তী (১৬)।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ফজলে আজিম কচি মিয়া মাইজদী শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করেন। তিনি দ্বিতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন। তার বাসার নিচ তলায় থাকে ভাড়াটিয়া। নিচ তলার একটি অংশ ভাড়া দেওয়ার জন্য 'টু-লেট' সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে।
ফজলে আজিম কচি মিয়ার মা হোসনে আরা বেগম জানান, নূর নাহার বেগম ও তার মেয়ে প্রিয়ন্তী সকালে বাসায় ছিলেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে কয়েকজন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় ঢুকে নূর নাহারকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় তার মেয়ে প্রিয়ন্তী চিৎকার করলে তাকেও কুপিয়ে তারা পালিয়ে যায়। নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রিয়ন্তী মারা যায়।
এ সময় এলাকাবাসী ধাওয়া দিয়ে আলতাফ হোসেন নামে একজনকে ধরে পিটুনি দেয়। পরে পুলিশ এসে তাকে আটক করে।
নিহত নুর নাহারের স্বামী ফজলে আজিম বলেন, তিনি শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। আজ সকাল ৯টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যান। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জানতে পারেন, তার বাসায় ডাকাত ঢুকেছে। তাৎক্ষণিক তিনি বাসায় এসে স্ত্রীর লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে জানতে পারেন, হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মেয়েও মারা গেছে।
ফজলে আজিম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি বাসা ভাড়া নিতে এসেছিলেন। তখন তিনি কর্মস্থলে ছিলেন। ওই ব্যক্তিকে পরে আসতে বলা হয়েছিল। ওই ব্যক্তি কিংবা তার লোকজন ডাকাতির উদ্দেশ্যে ভাড়াটিয়া সেজে বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী ও মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা করেছেন। এলাকায় কারও সঙ্গে তার কোনো শত্রুতা নেই। দুই তলা বাড়িটি তার নিজের। নিচতলায় একটি পরিবার ভাড়া থাকে।
ফজলে আজিমের বাসার একজন ভাড়াটিয়া বলেন, সকালে দ্বিতীয় তলা থেকে চিৎকার করতে করতে ফাতেমা রক্তাক্ত অবস্থায় দরজার সামনে আসে। পরে দরজা খুলে দিলে সে মেঝেতে পড়ে যায়। ওই অবস্থায় তাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নিহত এক মেয়েকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। ধারণা করা হচ্ছে, হাসপাতালে আনার পথে তার মৃত্যু হয়েছে। লাশ মর্গে আছে। একই ঘটনায় নিহত তার মায়ের লাশ মর্গে আনার পর দুজনের লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে।
সুধারাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজে ঘটনাস্থলে আছেন। ঘটনার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেনসহ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেছেন। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা সেখানে বিষয়টি দেখভাল করছেন। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী বলেন, ওই বাসা থেকে এক যুবক বের হওয়ার সময় তাকে আটক করতে চাইলে প্রথমে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে তাকে কিছু দূর ধাওয়া করে আটক করেন তারা। ওই যুবকের পরনে থাকা জামা-কাপড়ে রক্তের দাগ দেখা গেছে। পরে আশপাশের লোকজন ফজলে আজিমের বাড়ির দোতলায় গিয়ে দেখেন, তার স্ত্রীর লাশ পড়ে আছে।
জুন ১৪, ২০২৩
এসবিডি/এবি/
মন্তব্য করুন: