সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে আ.লীগ ও বিএনপির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী
সিরাজগঞ্জ: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এখনই বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। আর নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমে নিজেদের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে বিএনপি মামলা-হামলার শিকার হয়ে ঘরের মধ্যে দলীয় কর্মসূচি নিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। রাজনীতির মাঠে তাদের কোন উৎসাহ বা উদ্দিপনা না থাকলেও বিএনপি বলছে, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্ততিও নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, রাজপথ দখলে রেখে মাঠে নিজেদের ভিত শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতাদের দাবি, উন্নয়নের চিত্র দেখে জনগণ টানা চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাবে।
তবে এ আসনের ভোটাররা বরাবরই রাজনৈতিক সচেতন। গত সাড়ে ১৪ বছরে এই নির্বাচনী এলাকার সার্বিক চিত্রও পাল্টে গেছে। উন্নয়নের ছোঁয়ায় এই নির্বাচনী এলাকার রাস্তা-ঘাটসহ জীবনমানের ধরণও বদলে গেছে। ইতোমধ্যে সারাদেশের মতো এই নির্বাচনী এলাকাতেও বইছে ভোটের হাওয়া। বড় বড় রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। ভোটারদের মন জয় করতে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি।
রায়গঞ্জ উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এবং তাড়াশ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে এই আসন। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫২৯ জন। নির্বাচনের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনে পর পর তিনবারই বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের সর্বশেষ তিনটি নির্বাচনেই পর পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে রয়েছে মনোনয়ন নিয়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। আওয়ামী লীগ পরপর তিনবার এই আসন থেকে বিজয়ী হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও এই বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করছে ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরা। এর আগের তিনবারের নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপিও বসে নেই। তারাও আসনটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে আগামী নির্বাচনেও আসনটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর মধ্যে হতে পারে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
চলনবিল অধ্যাষিতু গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে বর্তমান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল আজিজ। তিনি ছাড়াও আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে রয়েছেন তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত কর্মকার, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. হোসেন মনসুর, রায়গঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান তালুকদার ইমন, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এ টি এম লুৎফর রহমান দিলু, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহ-সভাপতি কৃষিবিদ সাখাওয়াত হোসেন সুইট।
অন্যদিকে, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর তালিকার শীর্ষে রয়েছেন চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য হেভিওয়েট প্রার্থী আলহাজ আব্দুল মান্নান তালুকদার। এ ছাড়া রায়গঞ্জ উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ভিপি আয়নুল হক, তাড়াশ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার সেলিম জাহাঙ্গীর, বিএনপির কেন্দ্রীয় গ্রাম সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক সাইফুল ইসলাম শিশির।
তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা দুইবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সঞ্জিত কর্মকার বলেন, ছোটবেলা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে রাজনীতি করে আসছি। দলের দুর্দিনে যেমন মাঠে থেকে জেল, জুলম, হামলা, মামলার শিকার হয়েছি। উপজেলা আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে রাতদিন কাজ করছি।
সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদের বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যদি মনোনয়ন দেন তাহলে বিপুল ভোটে টানা ৪র্থ বারের মতো আওয়ামী লীগকে এ আসনটি উপহার দিতে পারবো। আর যদি আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে দলের অন্য কাউকে দেয়া হয় তবুও ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকাকে বিজয়ী করবো।
এ বিষয়ে চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য হেভিওয়েট প্রার্থী আলহাজ আব্দুল মান্নান তালুকদার বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ১৯৯১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়ে জনকল্যাণে যে কাজ করেছি, তার সাক্ষী এ অঞ্চলের জনগণ। তিনি স্থানীয় সরকার ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছিলেন।
তার দাবি, মনোনয়ন পেলে এ অঞ্চলের মানুষ আমাকেই জনপ্রতিনিধি হিসেবে বেছে নেবেন।
এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মোঃ আব্দুল আজিজ দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, বিগত নির্বাচনে দল তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার পর নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দলকে সুসংগঠিত করার কাজ করেছি। নির্বাচনে এলাকার উন্নয়নে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, গত চার বছরে সকল প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কাজ করেছি। আঞ্চলিক সড়ক, গ্রামীণ সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টসহ অবকাঠামোগত অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আগামীতে চলনবিলকে একটি পর্যটন শিল্প এলাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনাও হাতে রয়েছে। আমি আবারও মনোনয়ন পেলে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের একজন কর্মী হিসেবে কাজ করবো।
আগস্ট ১৪, ২০২৩
মৃণাল সরকার মিলু/এবি/
মন্তব্য করুন: