• ঢাকা

  •  বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

অপরাধ

কক্সবাজারে তৃতীয় লিঙ্গের ৪ জনসহ নারীদের টর্চার ফারুকুলের

বিশেষ প্রতিনিধি

 প্রকাশিত: ১০:০৮, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে তৃতীয় লিঙ্গের ৪ জনসহ নারীদের টর্চার ফারুকুলের

ভুক্তভোগী তৃতীয় লিঙ্গের প্রিয়া মনি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকজন নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, রাতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কান ধরিয়ে ওঠবস করাচ্ছে একদল অতিউৎসাহী জনতা। 

তাদের তোপের মুখে পড়া ওই ভুক্তভোগী কানে হাত দিয়ে ওঠবস করতে অপারগতা প্রকাশ করছেন। কিন্তু, সেখানে উপস্থিত এক যুবক লাঠি দিয়ে তাকে একাধিকবার আঘাত করেন। সেই লাঠির আঘাত থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগী কান ধরে ওঠবস করছেন।

গত শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে অভিযুক্ত ফারুকুল ইসলামকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। 

মারধরের ভিডিওতে যে যুবককে লাঠি হাতে মারতে দেখা যায়, তার নাম ফারুকুল ইসলাম। বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায়। তার বাবার নাম মাওলানা আব্দুল মজিদ। তিনি এখানে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। 

থানা প্রাঙ্গণে কথা হয় ভুক্তভোগী তৃতীয় লিঙ্গের প্রিয়া মনির সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিনের মতো সৈকতে ঘুরাফেরা করছিলেন। হঠাৎ এক যুবক এসে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে নির্যাতন শুরু করে। বেধরক পেটাতে থাকেন কয়েকজনকে। পরে কান ধরে উঠবস করতে না চাইলে আমাকে মারধর করা হয়৷ এক পর্যায়ে আমি দৌড়ে পালিয়ে রক্ষা পাই। 

ভিডিওতে মোবাইল ফেরত চাওয়া তৃতীয় লিঙ্গের আরোহী ইসলাম। তার বাড়ি ঢাকার বিমানবন্দর এলাকার হাজি ক্যাম্পে। তার দাবি, তিনি এবং তার কয়েকজন বান্ধবী কক্সবাজার বেড়াতে আসেন। উঠেন কক্সবাজারের হোটেল সি গার্ডেনে। ওইদিন (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে সৈকতে বেড়াতে বের হন। হঠাৎ এসে ফারুকুল নামে ওই যুবক তাদের ফোন কেড়ে নেন। ফোনটি চাইতে গেলে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়। এক পর্যায়ে টেনে হিচড়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের সামনে নিয়ে গেলে তিনি ঢাকায় ফেরত যাবেন বলে নিশ্চিত করে ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তায় রক্ষা পান। 

তিনি আরও জানান- ছাত্রলীগের রাজনীতি করি বলে বার বার বলছিলেন ফারুকুল। কিন্তু তার কোন প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি। সমন্বয়ক দাবি করে চিৎকার করতে করতে মারধর করছিলেন। 

আরোহী আরও অভিযোগ করেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের সামনে মারধর করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। কক্সবাজার সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এটি মামলা রুজু করা হবে পুলিশ আশ্বস্ত করেছে। 

তবে, থানা প্রাঙ্গণে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কক্সবাজারের অন্যতম প্রতিনিধি শাহেদ ওয়াহেদ জানান- অভিযুক্ত ফারুকুল তাদের কেউ নন। কক্সবাজারে কোনো সমন্বয়ক কমিটিও নেই। যারা আছেন সবাই কেন্দ্রের সমন্বয়কদের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। 

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. মছিউর রহমান বলেন, এজাহার পেয়েছি। সেখানে ফারুকুলসহ অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামি করার কথা বলা হয়েছে। ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে এটি মামলা হিসেবে রুজু করা হবে। আপাতত ফারুকুল পুলিশের কাছে আটক রয়েছে। অন্য কেউ জড়িত থাকলে যাচাই-বাচাই করে ব্যবস্থা। 

পুলিশ বলছে, যাচাই-বাচাই করে দেখা গেছে ভিডিও ১১ সেপ্টেম্বর রাতের। ওইদিনই নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের সদস্যদের ওপর হামলা করেন ফারুকুল। সেটি ভাইরাল হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত অভিযোগের সত্যতা পেয়ে এটি মামলা করা হয়েছে। ফারুকুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এসবিডি/এবি

মন্তব্য করুন: