বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে যেসব সিদ্ধান্ত হলো

ছবি: সংগৃহীত
ভারতের নয়াদিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গত ১৭ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দিনের এই সীমান্ত সম্মেলনে সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং বিএসএফ মহাপরিচালক শ্রী দলজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে।
বিএসএফ মহাপরিচালক সীমান্তে হত্যা কমানোর লক্ষ্যে ‘অ-প্রাণঘাতী’ নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধের বিষয়ে একমত হন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনায় বিজিবি মহাপরিচালক সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এ ধরনের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিএসএফ মহাপরিচালকের প্রতি জোর আহ্বান জানান।
সম্মেলনে গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার উদ্যোগ, সীমান্তের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি, সীমান্তবর্তী জনসাধারণের মধ্যে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ, সীমান্তে যেকোনো হত্যাকাণ্ডে যথাযথ তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ; কোনো স্থাপনা, কাঁটাতারের বেড়া বা প্রতিরক্ষামূলক স্থাপনা নির্মাণের আগে যৌথ পরিদর্শন দল (জেআরডি) দ্বারা অনুমোদন, ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা উন্নয়নমূলক কাজগুলো যথাযথ যৌথ যাচাইয়ের মাধ্যমে দ্রুত সমাধান; মাদক (ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা), স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রা, মানবপাচার, গবাদি প্রাণী পাচার ও অন্যান্য চোরাচালান রোধে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান এবং কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
উভয় বাহিনীর নজরদারি বৃদ্ধি এবং সীমান্তবর্তী জনগণকে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম না করতে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ; মানবপাচার রোধে পরস্পরকে সহায়তা এবং পাচারের শিকার ব্যক্তিদের উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম জোরদার; আগরতলা-আখাউড়া সীমান্তের চারটি খালের বর্জ্য পানি পরিশোধনের জন্য শোধনাগার স্থাপন এবং জকিগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে রহিমপুর খালের মুখ উন্মুক্তকরণ; উভয় বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতার প্রশংসা এবং যৌথ খেলাধুলা ও জয়েন্ট রিট্রিট সিরিমনি আয়োজনসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নে সম্মতি।
সম্মেলনে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে যেকোনো স্থায়ী স্থাপনা এবং কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ক্ষেত্রে উভয় দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ পরিদর্শকদলের পরিদর্শনের বিষয়ে আলোচনা হয়। যৌথ আলোচনার দলিলের ভিত্তিতে যেকোনো স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়।
সম্মেলনে আঙ্গরপোতা-দহগ্রাম সীমান্তের শূন্যরেখায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের বিষয়টি তুলে ধরেন বিজিবি মহাপরিচালক। সীমান্তে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করার বিষয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বিএসএফ মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ ছাড়া সীমান্তবর্তী নদীর ভাঙন রোধে তীরবর্তী বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ এবং পূর্বাভাস না দিয়ে বাংলাদেশের উজানে বাঁধ খুলে পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে সৃষ্ট অনাকাঙ্ক্ষিত বন্যার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করার জন্য বিএসএফকে অনুরোধ জানানো হয়।
ভারত থেকে বাংলাদেশে মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধ, স্বর্ণসহ অন্য দ্রব্যাদির চোরাচালান রোধ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ এবং সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মতো অপরাধ দমনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
সীমান্তে শান্তিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা’ কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিজিবি মহাপরিচালক।
এসবিডি/এবি
মন্তব্য করুন: