চিত্রনায়িকা মাহি ও তার স্বামীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
ঢাকা: ফেসবুক লাইভে মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাতে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানায় মামলাটি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি রকিব সরকার এবং ২ নম্বর আসামি মাহিয়া মাহি।
মাহিয়া মাহির স্বামী ব্যবসায়ী ও আওয়ামী লীগ নেতা রকিব সরকারের গাড়ির শোরুমে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে শুক্রবার সকালে মাহির ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে অভিযোগ করেন। এ সময় ওই ফেসবুক লাইভে পুলিশের বিরুদ্ধে দেড় কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে প্রতিপক্ষকে জমি দখল করে দিতে চেষ্টা করার অভিযোগ করা হয়।
এ সম্পর্কে জিএমপির কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ও তার স্বামী রকিব সরকার অপমান, অপদস্ত ও হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন মিথ্যা, বানোয়াটা, আক্রমণাত্মক, কুরুচিপূর্ণ ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর অপরাধ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন বাসন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ রোকন মিয়া।
ফেসবুক লাইভে মাহিকে নিয়ে রকিব সরকার বলেন, গাজীপুর মহানগরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের পূর্ব পাশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে ‘সনিরাজ কার প্যালেস’ নামে তার গাড়ির একটি শোরুম রয়েছে। স্থানীয় ইসমাইল হোসেন ও মামুন সরকার লোকজন নিয়ে শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে হামলা চালিয়ে ওই শোরুমে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। হামলাকারীরা শোরুমের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন আসবাব, দরজা-জানালার কাচ, টেবিল-চেয়ার ভাঙচুর এবং শোরুমের সাইনবোর্ড খুলে নেয়। অফিস কক্ষ তছনছ করে এবং টাকাপয়সা লুট করে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে রকিব সরকারের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
রকিব সরকার ও মাহিয়া মাহি পবিত্র ওমরাহ পালনের জন্য বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। রকিব সরকারের পারিবারিক সূত্র জানায়, শনিবার সস্ত্রীক তিনি দেশে ফিরবেন। শনিবার বিকেলে রকিব সরকার তার ওই শোরুমে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছেন।
শুক্রবার বিকেলেই সংবাদ সম্মেলন করেন ইসমাইল হোসেন। তার ভাষ্য, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের উত্তর পাশে তার ও মামুন সরকারের মালিকানাধীন সাড়ে ৩২ শতাংশ জমি রয়েছে। রকিব সরকার প্রায় পাঁচ বছর ধরে ওই জায়গায় জোরপূর্বক দখল করে গাড়ির শোরুম স্থাপন করেছেন। মামুন সরকার জমিতে কাজ করতে গেলে রকিব সরকার তার বাহিনীর লোকজন দিয়ে জোরপূর্বক নির্মাণসামগ্রীসহ লাখ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যান। ইসমাইল হোসেনের একটি রড বাইন্ডিং মেশিন ভেঙে ফেলে। এ সময় তার লোকজন এসে ইসমাইল হোসেন ও তার লোকজনকে মারধোর করেন। তিনিসহ আরো তিনজন আহত হন। এ ঘটনায় বাসন থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ফেসবুক লাইভে রকিব সরকার অভিযোগ করেন, জিএমপি পুলিশ দেড় কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে ইসমাইলের পক্ষে জমি দখল করে দিতে চেষ্টা করছে।
এ বিষয়ে ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘জমি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে রকিব সরকার আমার কাছে এক কোটি টাকা দাবি করেছিলেন। যেখানে এক কোটি টাকা দিলে সমস্যা সমাধান হয়, সেখানে কেন আমি পুলিশকে দেড় কোটি টাকা দেব? পুলিশ আমার পক্ষে থাকলে আজ আমি কেন মার খেলাম, কেন আমি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে অভিযোগ দিলাম।’
শোরুমে হামলা-ভাঙচুর প্রসঙ্গে গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ওসি সানোয়ার জাহান জানান, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানে রকিব সরকারের ২০-২৫ জন লোককে দেখা গেছে। শোরুমের জায়গা নিয়ে মালিকানার দ্বন্দ্বে মারামারির ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মার্চ ১৮, ২০২৩
এসবিডি/এবি/
মন্তব্য করুন: