• ঢাকা

  •  শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

ফিচার

ইছামতীর ‘শেষকৃত্য’

শাফায়াত স্বচ্ছ, শিক্ষার্থী

 প্রকাশিত: ১৯:১২, ৩০ আগস্ট ২০২২

ইছামতীর ‘শেষকৃত্য’

ছবি: আমবাড়ী বাজার সেতু সংলগ্ন ইছামতী। এই স্থানেই কেবল নদীর কিছুটা চিহ্ন আছে৷

দিনাজপুর: ভরা বর্ষায় টইটম্বুর নদী। দুপার ছাপিয়ে জল ঢুকছে লোকালয়ে। আসছে বড় বড় শস্য কিংবা পশুবোঝাই বজরা। মাছ ধরতে ব্যস্ত জেলেদের ডিঙিগুলো। দিনাজপুরের আমবাড়ী হাটের গল্প এককালে ছিল এমন৷ কিন্তু, এই জনপদের জন্মদাত্রী ইছামতী নদীর শেষকৃত্য এখন সম্পন্নপ্রায়। নদীর যে অস্তিত্ব আছে, তাও বোঝা দুষ্কর হবে সিংহভাগ স্থানে৷ মাঝেমধ্যে দু-একটা সাঁকোয় করুণাবশত নাম লেখা থাকে বলে জানা যায়, 'এইখানে এক নদী ছিল'।

বাংলাদেশে ইছামতী নামে নদী আছে পাঁচ থেকে ছয়টি। এদের অবস্থান যথাক্রমে দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, ঢাকা, পাবনা, কুষ্টিয়া ও রাঙমাটিতে৷ প্রথম চারটি এককালে সংযুক্ত ছিল বলে জানা যায়। শেষোক্ত পাঁচটি ইছামতীর অবস্থা ভালো না হলেও একেবারে নিশ্চিহ্ন নয়। দিনাজপুরের ইছামতী নদীই এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এ নদী এখন বিলীনপ্রায়।

অথচ এই ইছামতীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল আমবাড়ী, রাণীরবন্দরসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ৷ দিনাজপুরের অন্যসব নদীর মতোই চূড়ান্ত অবহেলার কবলে পড়ে শেষ হতে চলেছে এ নদীটি। নদী খননে নূন্যতম পদক্ষেপটুকুও নেয়া হয়নি কখনো। ফলে দখলে-দূষণে নদী হারিয়েছে তার গর্ভ। বর্তমানে ইছামতী পুরোদস্তুর চাষের আবাদি জমি, মাঝে মধ্যে একটা দুটো খানা-খন্দ বলছে এখানে কখনো নদী ছিলো। এখন তাও বন্ধ করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে৷ 

ইছামতী নদীটির উৎপত্তি এ জেলারই খানসামা উপজেলার আঙ্গরপাড়ার বিলাঞ্চলে। প্রায় ৭০ মাইল দীর্ঘ পথ পেরিয়ে, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর, ফুলবাড়ী উপজেলার পাশ ঘেঁষে সীমান্ত পৃথক করে ভারতে গিয়ে আত্রাই নদীতে পতিত হয়েছে এটি৷ ইছামতী থেকে জন্ম নেয়া আরো দুটো নদী হলো - ছোট যমুনা ও ভেলামতি৷ পুরোনো পাড়ের চিহ্ন বলছে, নদীর গড় প্রস্থ ১৫০ মিটার ছিল। এখন অবশ্য ১৫ মিটারও পাওয়া যাবে না অনেক জায়গায়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঝোলানো ব্যানারে কোথাও নদীকে ডাকা হয়েছে মরা ইছামতী খাল, কোথাও এর দৈর্ঘ্য দেখানো হয়েছে মাত্র ২৭ মাইল।

কুতুবডাঙ্গা সেতুর কাছে দেখা গেছে, গতিপথ কেটে নদীর শাসন করার পুরোনো প্রচেষ্টা৷ চিহ্ন মুছতে থাকলেও দীর্ঘদেহী সেতু বানাতে কার্পণ্য করা হয়নি এতটুকু। যেন নদীর জীবিত থাকাটা জরুরি নয়, সেতু বানিয়ে তাতে উদ্বোধনের নামফলকটা বসানোই সার্থকতা।  

ইছামতী অববাহিকায় ধানচাষ হয় প্রচুর। এ অঞ্চলের শতকরা নব্বইভাগ মানুষ কৃষক৷ জলাঙ্গী সচল থাকলে যে তাদের কতোখানি উপকার হতো, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু যে নদীর চিহ্নই নেই, সে জল ধরবে কোত্থেকে! 

এই হাল কেন হলো ইছামতীর? উত্তর দিতে হবে কর্তৃপক্ষকে৷ জবাব খুঁজতে হবে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের। উত্তরে মেরুকরণের এই দুর্দিনে একটি নদীও যদি হারিয়ে যায় মানচিত্র থেকে, তবে সে ক্ষতি হবে অপূরণীয়, এবং তার মাশুল দিতে হবে আমাদেরই৷ অবিলম্বে তাই খননের তালিকায় ওঠানো হোক ইছামতীর নাম৷

পূণর্ভবা, গর্ভেশ্বরী, তুলাই, ঢেপার সাথে সাথে নতুন প্রাণ আসুক ইছামতীরও৷ এই আশা এখনো লালন করেন নদীপাড়ের হাজারো মানুষ৷ তাই যে করেই হোক, ইছামতীকে বাঁচাতেই হবে৷

সম্প্রতি নদ আন্দোলনের সংগঠন 'রিভারাইন পিপল বাংলাদেশে'র তরফে 'ইছামতী নদী রক্ষা কমিটি' প্রণয়ন করা হয়েছে আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপের জন্য। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ইছামতীর প্রাণ ফেরানো অসম্ভব কিছু নয় - এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা।

আগস্ট ৩০, ২০২২

এসবিডি/এবি/

মন্তব্য করুন: