• ঢাকা

  •  শনিবার, ডিসেম্বর ২১, ২০২৪

অর্থ ও কৃষি

গোপালপুর হাটে টমেটোর হাসি! আনন্দে কৃষক

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

 আপডেট: ১৮:৫৪, ৬ মে ২০২৩

গোপালপুর হাটে টমেটোর হাসি! আনন্দে কৃষক

দিনাজপুর: কৃষি আবহমান বাংলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ঐতিহ্যে ও মূল চালিকাশক্তি। জাতীয় খাদ্য উৎপাদনে দেশের সর্ব উত্তর-পশ্চিমের শস্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুর জেলার অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন। এবার দিনাজপুর জেলাতে ১ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে নাবী টমেটো চাষ হয়েছে। নাবী টমেটো জাতের মধ্যে বিপুল, রানী, রোমা ভি, এফ (প্রোভেসিফ) চাষাবাদ বেশী হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি হেক্টর জমিতে ৪৯.৯০ টন ধরা হয়েছে অর্থাৎ ৫৫ হাজার মেট্রিকটন নাবী টমেটো দিনাজপুর জেলাতে উৎপাদন হবে।

জেলার সব উপজেলা থেকে সদর উপজেলাতে এই বছর ৭৯০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। বৃষ্টিপাত না হলে টমেটো উৎপাদনের বাজার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে শেষ হবে। এর মধ্যে সদর উপজেলার শেখপুরা ৪নং ইউনিয়ন অন্যান্য ইউনিয়নের চাইতে সিংহভাগ টমেটো চাষের ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। 

বর্তমানে এই ইউনিয়নে ৫০০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষাবাদ হয়েছে। সদর উপজেলাতে ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের গোপালপুরহাটে (গাবুড়ায়) ৩৩ শতকের জায়গায় উপর টমেটোর বাজার জমে উঠেছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষকরা উৎপাদিত টমেটো খুব সকালে বাজারে নিয়ে আসেন। রাস্তায় টমেটোর সারি সারি গাড়ি অপেক্ষায় থাকে। ব্যবসায়ীরা তাদের পছন্দমত টমেটো সংগ্রহ করে।

পূর্নভবা নদীর ব্রিজের ওপারে বসেছে টমেটোর বড় আড়াৎ। এই মৌসুমে বাজারটি ২৩ লাখ টাকায় ইজারাদার নিয়েছে। হাটটি গোপালপুর হাট (গাবুড়া) নামে শুধু দিনাজপুর জেলা নয় দেশের সমগ্র জেলাতে পরিচিতি রয়েছে। প্রতি নিয়ত এই বাজার থেকে ৪০-৫০টি ট্রাক পণ্য দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিবাহিত হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে এসেছে।

ব্যবসায়ী দেলোয়ার মাতব্বর বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় ঢাকা থেকে এসেছি। প্রতিদিন ২ থেকে ৩ ট্রাক পণ্য ঢাকায় পাঠাই। প্রতি ট্রাকে ৪৫০ থেকে ৫০০ ক্যারেট টমেটো ভর্তি করা হয়। প্রতি টমেটো ক্যারেটে খরচ পড়ে ১০০ টাকা ঢাকা পর্যন্ত নিয়ে যেতে। গাড়িভাড়া বেশি হওয়াতে ক্যারেট প্রতি দাম বেড়ে যায়।

শরিয়তপুরের ব্যবসায়ী রিপন বলেন, এখানকার বাজারের পরিবেশ ভালো। শ্রমিকের কোনো অভাব নেই। আমাদের কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। টমেটোর মানও ভালো।

কৃষকরা জানান, এক বিঘা জমিতে টমেটো উৎপাদন করতে ৪০-৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি বিঘাতে ২৫০-৩০০ মণ টমেটো উৎপাদন হয়। এক মণ টমেটো বিক্রয়ের উপযোগী করতে ৩০০-৩৫০ টাকা খরচ হয়। বর্তমান সময়ে বাজারে টমেটোর গুনাগুনের উপর ভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে।

টমেটোর বাজারে সরজমিনে দেখা গেছে, চাহিদার তুলনায় এবার উৎপাদিত টমেটো বেশি পরিমানে আমদানি হওয়ায় আর মধ্যস্থকারী ব্যবসায়ীরা নিজস্ব সিন্ডিকেট হওয়ায় কৃষকরা ন্যায দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কখনো বাজার উচ্চগতিতে আবার কখনও বাজার নিম্নগতিতে চলছে।

কৃষকরা বলছেন, উৎপাদিত টমেটো হিমাগারে রাখতে পারলে বাজারের এ রকম প্রভাব কমবে। বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখা যাবে। চাষীরা নায্য দাম পাবে এবং সেই সাথে টমেটো উৎপাদনে উৎসাহিত হবে কৃষকরা।

৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৫৫০ থেকে ৬০০ টন টমেটো দেশের বিভিন্ন জেলাতে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এখানকার টমেটো বাজারে সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। দেশের নানা স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসছে, টমেটোর বাজার বিস্তৃতির ক্ষেত্রে জায়গার স্বল্পতা আছে।

বাজার সম্প্রসারিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, উন্নত হিমাগার থাকলে বাজারে দাম স্থিতিশীল থাকবে, তাহলে কৃষকরা নায্য দাম পাবে এবং বাজার সম্প্রসারিত হবে।

শেখপুরা ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোস্তাকিন বলেন, চাহিদার তুলনায় বর্তমানে কৃষকরা পর্যাপ্ত টমেটো বাজারে সরবরাহ করছে এবং কৃষকরা ন্যায দাম পাচ্ছে। দিন দিন বাজারে টমেটোর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরং কৃষকরা আগে লোকসানের হাত থেকে রেহাই পেয়ে মুখে হাসি ফুটছে।

মে ৬, ২০২৩

আব্দুস সালাম/এবি/

মন্তব্য করুন: