• ঢাকা

  •  রোববার, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪

অর্থ ও কৃষি

এসিআই ও লাল তীর বীজ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত চুয়াডাঙ্গার কুমড়াচাষীরা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:

 প্রকাশিত: ১৯:৪২, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এসিআই ও লাল তীর বীজ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত চুয়াডাঙ্গার কুমড়াচাষীরা

ছবি: সময়বিডি.কম

চুয়াডাঙ্গা: মিষ্টিকুমড়ার বীজ কিনে জমিতে বপন করার পর কোনো ফলন না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চুয়াডাঙ্গার চাষীরা। সরকার অনুমোদিত এসিআই ও লাল তীর কোম্পানির কুমড়ার বীজ কিনেছিলেন তারা। কিন্তু সেই বীজ কোনো ফলই দেয়নি।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা বীজ কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে বারবার ধরণা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। পরে তারা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে। 

বীজ থেকে ফলন না পাওয়ার বিষয়টি কৃষকরা শুরু থেকেই কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়েছিলেন কিন্তু তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। যখন গুরুত্ব দিয়েছেন, তখন আর কিছু করার ছিল না।

আখ চাষ হয় না এমন জমি বিঘাপ্রতি সাড়ে ১০ হাজার টাকা দরে ছয় মাসের জন্য ইজারা দেয় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। কয়েকজন চাষী জমিগুলো ইজারা নিয়ে মিষ্টিকুমড়ার চাষ করেন। ভালো মানের বীজ বিবেচনায় তাদের অনেকেই এসিআই ও লাল তীর কোম্পানির কুমড়া বীজ বপন করেন। সেই বীজ থেকে বড় বড় গাছ হলেও তাতে কুমড়া ধরেনি। 

চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী, কোটালী ও ছয়ঘরিয়া গ্রামের চাষিদের প্রায় ১৭০ বিঘা জমিতে দেখা গেছে এমন চিত্র।

কৃষকদের দাবি, ফলন না আসায় কুমড়া আবাদ থেকে তাদের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫১ লাখ টাকারও বেশি। জমি ইজারা, জমি প্রস্তুত করা, সার, কীটনাশক, বীজ, সেচ সব মিলিয়ে তাদের যে খরচ হয়েছে তার এক টাকাও ফেরত পাবেন না। 

অপরদিকে ছয় মাস পূর্ণ হয়ে গেলেই এই জমি কোম্পানিকে ফিরিয়ে দিতে হবে বলে অন্য কোনো আবাদ দিয়েও ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই।

কোটালী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত চাষী জুয়েল রানা আড়িয়া কৃষি খামারে ৩০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে লাল তীর কোম্পানির বীজ কিনে কুমড়ার চাষ করেছিলেন। সেচ, কীটনাশক প্রয়োগ করেছেন নিয়ম মেনে। সব মিলিয়ে তার খরচ হয়েছে প্রায় ছয় লাখ টাকা। আশা ছিল ভালো ফলন হলে বড় অঙ্কের লাভের মুখ দেখবেন। কিন্তু লাভ তো দুরের কথা, খরচের ছয় লাখ টাকার ধাক্কা কীভাবে সামলাবেন, তা নিয়েই গভীর দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার।

জুয়েল রানা সময়বিডি.কম-কে বলেন, বীজ কেনার আগে কোম্পানির লোকজন নিয়োমিত যোগাযোগ রাখত। এখন তারা আর ফোন ধরে না। আমরা কৃষি বিভাগকেও বলেছিলাম। তারা বিষয়টি আমলেই নেয়নি। প্রায় তিন সপ্তাহ পর তারা ক্ষেত পরিদর্শনে আসেন। ততদিনে আর কারো কিছু করার নেই।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষী হিজলগাড়ী গ্রামের সাইফুল আজম মিন্টু বলেন, 'আড়িয়া ও ডিহি কৃষি খামারের ৫০ বিঘা জমি ইজারা নিয়েছিলাম। লাগিয়েছিলাম এসিআই কোম্পানির কুমড়ার বীজ। কিন্তু বীজ থেকে গাছ হলেও তাতে কুমড়া ধরেনি। বিষয়টি কোম্পানির প্রতিনিধি ও এলাকার দায়িত্বরত কৃষি কর্মকাতের বলেছি। কোনো কাজ হয়নি।' প্রায় ১৫ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানান তিনি।

ছয়ঘরিয়া গ্রামের চাষী শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি ৫০ বিঘা জমিতে লালতীর ও ১০ বিঘা জমিতে এসিআইয়ের কুমড়া বীজ বপন করেছিলেন। তারও কোনো গাছেই কুমড়া ধরেনি। বীজ বিক্রির সময় কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন তারা আর কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না। শহিদের সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ লাখ টাকা।

কোটালী গ্রামের চাষী আনিস উদ্দিন বলেন, ৩০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে এসিআই ও লাল তীর কোম্পানির কুমড়া বীজ বপন করেছিলাম। গাছে কোনো কুমড়া ধরেনি। কোম্পানির প্রতিনিধিরা এখন আর দেখা করছে না।

ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের অভিযোগ, কুমড়া বীজ বপনের পর গাছে ফল না আসায় তারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আফরিন বিনতে আজিজের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনেক দেরি করেছেন। কৃষকরা কোনো ধরনের সহায়তা চাইতে গেলে তিনি বিরক্ত হন বলেও অভিযোগ চাষীদের।

এ ব্যাপারে এসিআই বীজ কোম্পানির এরিয়া ম্যানেজার (সেলস) আনোয়ার হোসেন সময়বিডি.কম-কে বলেন, বিষয়টি আমরা জানার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সেখান থেকে কোনো নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লাল তীর কুমড়া বীজ কোম্পানির সেলস ম্যানেজার ফরিদ বলেন, 'চুয়াডাঙ্গা শহরের আলী হোসেন সুপার মার্কেটে অবস্থিত বগা মিয়ার দোকান থেকে বীজ নিয়ে আমি বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করি। ওই বীজ ভাল না মন্দ সেটি আমার জানা নেই। এ বীজের দায়িত্ব নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।'

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, কয়েকজন চাষী এসিআই ও লাল তীর কুমড়া বীজ বপন করে কুমড়ার ফলন পাননি। বিষয়টি জেনে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা চাষীদের জমিতে জৈব সার ব্যবহার করতে বলেন। তবে তাতেও কোনো কাজে আসেনি। ফল না হওয়ার কারণ খুঁজতে একটি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, এ জেলায় যে প্রতিষ্ঠানই বীজ বিক্রি করুক না কেন, তাদের ডেটাবেজ জেলা ও উপজেলা কৃষি কার্যালয়ে থাকা জরুরি। এ ঘটনায় চাষীদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। ফলে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। আর বীজ বিক্রেতার কাছে একজন চাষী কিন্তু ক্রেতা। ফলে কৃষক বীজ নিয়ে প্রতারণার শিকার হলে তার জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগও আছে।

সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৩

সালাউদ্দীন কাজল/এবি/

মন্তব্য করুন: