পেলে ছিলেন শতবর্ষের সেরা ফুটবলার
পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ জন্ম নেন যারা কালে কালে যুগে যুগে কর্মগুনে সেরাদের সেরার আসনটা পাকাপোক্ত করে যান। এমন কীর্তিমানেরা মৃত্যুহীনের মতো বেঁচে থাকেন শত-হাজার বছর। জীবদ্দশায় তাঁরা যেমন লাখো-কোটি মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হন তেমনি জীবন্ত থাকেন মৃত্যুর পরও।
এমনই একজন কীর্তিমান ব্যক্তিত্ব ফুটবলের জাদুকর পেলে। তিনি ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা ছিলেন একজন অপেশাদার ফুটবলার এবং তাঁর প্রথম কোচ। এডসন আরন্তেস ডো নাসিমেন্তো পেলে জীবদ্দশায় বহু ম্যাচ জিতেলওে বার্ধক্যে এসে ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে হারলেন জীবনযুদ্ধ নামক শেষ ম্যাচটিতে।
২৯ ডিসেম্বর ৮২ বছর বয়সে এক জীবনে তিনবার বিশ্বকাপ জেতা খেলোয়ার, ব্রাজিলিয়ানদের ‘রাজা’ চলে গেলেন না ফেরার দেশে। পেলে’র মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। পরে তাঁর অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়। এ মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরলে সর্বত্র নামে শোকের ছায়া। ব্রাজিলে ঘোষণা করা হয়েছে তিন দিনের শোক।
মাটির মধ্যে মূর্তি যেমন প্রচ্ছন্ন অবস্থায় থাকে তেমনি ফুটবল খেলাটাও হয়তো সহজাত ভাবেই মিশেছিল তার সাথে। ধীরে ধীরে এর প্রকাশ ঘটে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান কিশোর পেলে যখন সাও পাওলোর রাস্তায় মোজা দিয়ে তৈরি ফুটবল খেলতেন তখন তার খেলার কৌশল মুগ্ধ করতো সকলকে। ১৫ বছর বয়সে সান্তোষের মূল দলে খেলে নৈপূন্য দেখানোর পর ১৬ বছর বয়সে খেলেন ব্রজিলের জাতীয় দলে। এর পর কেবলি এগিয়ে যাওয়া। ছড়িয়ে পরতে থাকে তাঁর নাম যশ খ্যাতি।
১৯৫৮ সালের বিশ্বকাপে ১৭ বছর বয়সী সর্বকণিষ্ঠ খেলোয়ার পেলে চার ম্যাচে ছয় গোল করে তাক লাগিয়ে দেন পুরো বিশ্বকে। এরপর কেবলি এগিয়ে যাওয়ার পালা। ১৯৬২ তে চিলি’র বিশ্বকাপেও বিজয়ের স্বাদ পান। ১৯৬৯ সালে নিজের ক্যারিয়ারে হাজারতম গোল করার গৌরব অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে ইতালিকে হারিয়ে তিনটি বিশ্বকাপ জেতার সৌভাগ্য অর্জন করেন। ১৯৭৫ এ যোগ দেন নিউইয়র্ক কসমস এ। শেষ ম্যাচ খেলেন ১৯৭৭ সালের ১ অক্টোবর জায়ান্টাস স্টেডিয়ামে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পেলে সর্বমোট ১ হাজার ৩৬৩ ম্যাচ খেলে ১ হাজার ২৮১ গোল করেন। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি তাঁকে শতাব্দীর সেড়া ক্রীড়াবিদ ঘোষণা করেন। ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা তাঁকে শতবর্ষের সেরা ফুটবলারের স্বীকৃতি দেয়।
বিশেষ ক্রীড়া মেধা সম্পন্ন কৃষ্ণাঙ্গখেলোয়ার পেলে পালন করেছেন ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্বও।
অনেকের দৃষ্টিতে তিনি সর্বকালের সেরা খেলোয়ার। তার পর দিয়াগো মারাদোনাও হয়ে ওঠেন একজন চৌকষ খেলোয়ার। সাম্প্রতিক কালে মেসি, রোনালদো, নেইমার, এমবাপ্পে যেমন নিজেদের নৈপূণ্য দেখিয়ে লাখো ভক্তের মন জয় করে নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করেছেন তেমনি একটা সময় ছিল কেবলি পেলেময়। ব্রাজিলের কালো মানিক খ্যাত পেলে সাও পাওলোর আলবার্ট আইনষ্টাইন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করলেও তিনি অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন মানুষের মনে। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মির্জাপুর ডিগ্রি কলেজ, চাটমোহর, পাবনা, বাংলাদেশ।
মন্তব্য করুন: