কেমন হচ্ছে দিনাজপুরের নদী খনন?
ছবি: সময়বিডি.কম
উত্তরের শস্যভান্ডার দিনাজপুরের বুক চিরে বয়ে গেছে আত্রাই,পূনর্ভবা, করতোয়া, ঢেপা, টাঙ্গন, কুলিক, গর্ভেশ্বরী, ছোট যমুনা ইছামতীসহ প্রায় ৩০টি নদ-নদী৷ দেশের সবচেয়ে উঁচু এই জেলা মেরুকরণের অন্যতম শিকার, যার গ্রাসে মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছিল নদীগুলো৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত 'ডেলটা প্ল্যান-২১০০' এর আওতায় দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অস্তিত্বহীনতায় ভোগা এসব নদীর খনন কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের শেষের দিকে৷ ২০২২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৪টি উপজেলার ৭টি প্রকল্পে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী খননের উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। খননের দায়িত্বে ছিলো বিআইডব্লিউটিএ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড। কেমন হলো সেই নদীগুলের খননকাজ? সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা হয়েছে সেই তথ্য -
পূনর্ভবা:
দিনাজপুর শহর গড়ে উঠেছিল পূনর্ভবা (স্থানীয় ভাষায় কাঞ্চন) নদীর তীরে। একে কেন্দ্র করেই চলতো নৌপথে বানিজ্য যোগাযোগ। অথচ পাঁচ দশক খননের অভাবে নাব্যতা হারিয়ে এ নদীটি পরিণত হয়েছিল খেলার মাঠে। ২০১৮ সালে ভয়াবহ বন্যায় তলিয়েছিল দিনাজপুর। গতবছর খনন শুরু হওয়া পূনর্ভবা এখন অনেকটাই আগের রূপে। নদীতে দেখা মিলছে অগাধ জলরাশি। যদিও ড্রেজিং কাজের গতি বেশ ধীর, তবে পুরো কাজ শেষ হলে যৌবন ফিরতে পারে পূনর্ভবায়, এমনটাই প্রত্যাশা শহরবাসীর।
আত্রাই:
এ জেলার সবচেয়ে বড় নদী। খনন শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের মার্চ নাগাদ। খননের বালু অবৈধভাবে বিক্রি এবং নদীতেই ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছিলো, যার সত্যতাও পাওয়া গেছে ভূষিরবন্দর আত্রাই সেতুর কাছে। বিরাটাকার বালুর স্তুপ বর্ষায় আবার চলে গেছে নদী গর্ভেই। কাজেই এ নদীর খননে বিশেষ উপকার হবেনা বলেই মত স্থানীয়দের।
উল্লেখ্য, আত্রাই নদীতে রয়েছে দুটি রাবার ড্যাম, যার দুটিই বর্তমানে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
গর্ভেশ্বরী:
দিনাজপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আরেক নদী আত্রাইয়ের শাখা গর্ভেশ্বরী। ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদীটি ছিল একেবারেই নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। ২০২১-২২ অর্থবছরে নদীটি খনন করে আবারো পুরোনো প্রবাহ ফেরত আনা হয়েছে। সম্পূর্ণ হারানো নদীকেও যে ফেরানো সম্ভব, গর্ভেশ্বরী তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তবে স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, নদী খনন করতে গিয়ে নষ্ট করা হয়েছে তাদের ক্ষেতের ফসল।
ঢেপা ও ছোট ঢেপা:
কান্তজী মন্দির সংলগ্ন ঢেপা ও এর শাখা ছোট ঢেপা নদীর খননও চলমান৷ প্রশস্ত ঢেপার বুকে জাগা দীর্ঘ চরগুলো কেটে নদীগর্ভ ফেরানো হচ্ছে। তবে এখনেও আছে নদীর বুকেই বালু জমানোর পুরোনো অভিযোগ৷ হারাতে বসা ছোট ঢেপা নদী খননে প্রাণ ফিরে পেয়েছে।
এ ছাড়াও, তুলাই, টাঙ্গন, নলশীশা, ভুল্লি প্রভৃতি নদীর খনন মোটামুটি সন্তোষজনক৷ কিছু নদীর খনন শেষ হয়েছে, কিছু নদীর চলমান এবং বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনায় আছে। খননের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ইছামতী, ছোট যমুনা, চিরিসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদী।
বৃহত্তর দিনাজপুর ও এ অঞ্চলের কৃষিজ অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে নদ-নদীগুলো খননের কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন এবং তালিকায় নাম না ওঠা নদীগুলো দ্রুত খননের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি - এমনটাই মত জেলাবাসীর৷
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩
মন্তব্য করুন: