মির্জা আজম: জনসেবা-উন্নয়নে অনুকরণীয় নেতৃত্ব
নেতা হলেন তিনি, যিনি একদল মানুষকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রভাবিত করেন। এই বিষয়টি কোনও খেতাব বা প্রথাগত কর্তৃত্বের উপর নির্ভরশীল নয়। তিনি মানুষকে নতুন পথের সন্ধান যেমন দেন, তমনই নিয়ে যান গন্তব্যে। নিজের ভালো-মন্দ পরোয়া না করে এগিয়ে চলেন দুর্বিপাকে। মানুষের মুক্তির আন্দোলনে, সংগ্রামে। নিশ্চিত করেন সার্বজনীন কল্যাণ। প্রকৃত নেতা এমনই। যার ধ্যান-ধারণায় শুধুই মানুষের ভালো চাওয়া। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের সকল নেতার ধর্মই এমন। হাল আমলে এমনই এক নেতাকে দেখেছে জামালপুবাসী। যিনি নিজ গুণে হয়ে গেছেন সারা বাঙলার 'আজম ভাই'।
বলছি মির্জা আজম, এমপির কথা। যিনি জননেতা, জনগণের নেতা। এলাকার মানুষ যার কাছে মুনিব। জনসেবাই যার মূলমন্ত্র। মানুষকে পূজা করে সাহস ও প্রত্যয় নিয়ে যিনি একটি পিছিয়ে পড়া জেলাকে দেখিয়েছেন আলোর দিশা, দিয়েছেন উন্নয়নের ছোঁয়া। এখন দেশের রোল মডেল এই জনপদ। জনসেবায় এবং উন্নয়নে দেশে অনুকরণীয় নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন।
পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে তিনি স্কুলে পড়েন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড তাঁর মনে দাগ কাটে, বেশ কষ্ট দেয়। কিশোর মির্জা আজম প্রাণপনে এ ভয়াবহ ঘটনার কুশীলবদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাঁর ভালো লাগা মূলত তখন থেকেই। একজন মানুষ একটা অবহেলিত জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, স্বাধীনতা এনে দিলেন- আর কতিপয় কুলাঙ্গার যেন তাঁকেই সপরিবারে হত্যা করলো। এ ঘটনা তাঁকে এখনও কষ্ট দেয়। যা তিনি তাঁর বক্তব্যে প্রায়ই বলেন। মুজিব প্রেমে উদ্দীপ্ত করে। এখান থেকেই ছাত্রলীগের প্রতি তাঁর ভালোলাগা শুরু।
১৯৭৭ সাল, তিনি তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। বঙ্গবন্ধু প্রেমে উদ্ভাসিত হয়ে যোগ দেন ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগে। মূলত এর মধ্য দিয়েই তাঁর রাজনীতিক জীবনের শুরু। সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে পড়া অবস্থায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমিউজমেন্ট অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। পরে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সভাপতি হন।
১৯৮৭ সালে জামালপুর জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক, ১৯৯১ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা যুবলীগের সভাপতি হন। একই সঙ্গে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদেও। এর মাঝে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মাত্র ২৭ বছর বয়সে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসন থেকে অংশ নেন ভোটে। নির্বাচিত হন সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য।
অল্প বয়সে বড় দায়িত্ব পেয়ে বেশ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে তাঁকে যেতে হয়েছে। তাঁর রাজনৈতিক উত্থান মেনে নিতে পারেননি প্রতিপক্ষ তৎকালীন সরকারি দলের নেতারা। জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী) আসনের এমপি, বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব ব্যারিস্টার আব্দুল সালাম তালুকদারের সঙ্গেও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। রোষানলে পড়ে জীবন বিপন্ন হওয়ার উপক্রম হয়েছে বারংবার, তবু তিনি দমে যাননি। সাহস নিয়ে দৃঢ় মনোবলে এগিয়ে চলেছেন সামনের দিকে।
সর্বকনিষ্ঠ সংসদ সদস্য হলেও জাতীয় সংসদে বিএনপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেন মির্জা আজম, এমপি। এ ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। কিন্তু দুঃসময়ে তিনি ছিলেন অবিচল, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জ্বীবিত হয়ে ছুটে গেছেন গণমানুষের কাছে। মানুষও তাঁকে গ্রহণ করেছে। তিনি দেশজুড়ে পরিচিত হয়েছেন সাহসী ও আপসহীন নেতা হিসেবে। তিনি উন্নয়নের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষাকে বেছে নিয়েছেন।
একপর্যায়ে জামালপুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই যেন তাঁর নেশায় পরিণত হয়। ক্ষমতায় না থাকায় ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এলাকার উন্নয়ন করার মতো সুযোগ তাঁর ছিলো না। তাই বলে তিনি বসে থাকেননি। সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে এলাকার অবকাঠামো উন্নয়নসহ বেশ কিছু কাজ করেছেন। যার সুফল আজও ভোগ করছে মানুষ।
মির্জা আজম, তৃণমূল থেকে উঠে আসা একজন বিচক্ষণ ও সাহসী নেতৃত্বের নাম। বাঙলার যুব সমাজের কাছে তিনি আজ অনুপ্রেরণার গল্প।
কলেজ পর্যায়ে দেশের অন্য কোনো কলেজে ‘টিএসসি’ আছে কিনা- আমার জানা নেই। তবে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে টিএসসি।
আইকনিক লিডার। জামালপুর ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও জেলা আওয়ামী লীগ থেকে এখন তিনি জাতীয় নেতা। বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন, প্রিয় আজম। তাই তো ২০০৩-২০১২ মেয়াদে তাঁর কাঁধে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার দেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যার আদেশ তাঁর কাছে 'ইবাদতে'র মতো। তাই তো নেত্রীর আস্থার প্রতিদান দিয়ে চলেছেন তাঁর কর্মে-দায়িত্বে। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রাম, মেধা ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে রাজপথে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগকে সু-সংগঠিত করেন।
পরবর্তীতে তিনবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন তিনি। তাঁর ৪৬ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে ৩৩ বছর ধরে মহান জাতীয় সংসদে জামালপুর- ৩ আসনের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
তিনি বিরোধী দলীয় হুইপ, সরকার দলীয় হুইপ, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেছেন। তিনি পাট ও বস্ত্রকে ইউটার্ণ করিয়ে মানুষের কাছে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তাঁর সময়ের কিছু উদ্যোগ বেশ প্রশংসিতও হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে পরপর দুইবার ঢাকা বিভাগের দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা বিভাগের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সঙ্কট নিরসন করে দলকে সুসংগঠিত করে চলেছেন তিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগের সভাপতি দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য ঢাকা বিভাগ আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটি ইউনিটকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করেছেন তাঁর মেধা ও সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে। যেমনটি করেছিলেন আওয়ামী যুবলীগে দায়িত্বে থাকা অবস্থায়। যুবলীগের নানক-আজম কমিটি এখনও মানুষের মুখে মুখে ফেরে।
মির্জা আজম এমপি যেখানে যে দায়িত্ব পেয়েছেন সেখানেই সফলতার পরিচয় দিয়েছেন। এবার তাঁর নিজ জেলার দিকে তাঁকানো যাক। মির্জা আজমের নেতৃত্বে জামালপুর আজ ঐক্যবদ্ধ। জেলা থেকে ওয়ার্ড- প্রতিটি কমিটি পুনর্গঠন করে দলকে চাঙ্গা করে তুলেছেন তিনি। ছোট-খাট সঙ্কটের কথা তাঁর কানে এলেই তিনি তা নিরসনের উদ্যোগ নেন। ফলে জামালপুর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন দেশের ‘মডেল’ ইউনিট হিসেবেও উপস্থাপিত হতে পারে। গত দেড় দশকে এ জেলার যে উন্নয়ন হয়েছে অনেক মহানগরেও হয়নি। এটা সম্ভব হয়েছে কেবল তাঁর নেতৃত্বের গুণে।
জামালপুর-একসময়ের অবহেলিত ও অনুন্নত জেলা। নদী ভাঙনসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত জনপদ। কিন্তু সেই জামালপুরকে দেশে একটি সমৃদ্ধ জেলা হিসাবে রূপান্তর করে তিনি প্রমাণ করেছেন একজন রাজনৈতিক নেতা তথা জনপ্রতিনিধির সততা, নিষ্ঠা, মেধা, সক্ষমতা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে নিজের নির্বাচনী এলাকাসহ সমস্ত জেলার উন্নয়ন করা সম্ভব। এমনকি এখন অনেক মন্ত্রী-এমপিও মনে করেন, নেতৃত্বের গুণাবলী ও সংসদ সদস্য তথা জনপ্রতিনিধি হিসাবে মির্জা আজম এমপি বাংলাদেশের রোল মডেল। তিনি কথার চেয়ে কাজ বেশি করেন, দায়িত্ব ও সংকট মোকাবিলায় দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশ পালনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত প্রাণ। জামালপুরে মির্জা আজম, এমপির নেতৃত্বে ৬০ হাজার কোটির বেশি টাকার উন্নয়ন কাজ চলছে।
জেলার মানুষ যা চেয়েছে তাই পেয়েছে এবং চাওয়ার বাইরেও তাঁর নিজস্ব ভাবনা থেকে অনেক উন্নয়নকাজ করে চলেছেন। কলেজ পর্যায়ে দেশের অন্য কোনো কলেজে ‘টিএসসি’ আছে কিনা- আমার জানা নেই। তবে সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে টিএসসি। শুধু তাই নয়, কলেজের উন্নয়ন কাজে তিনি নিবেদিত প্রাণ।
একজন মির্জা আজমের কল্যাণে পিছিয়ে থাকা প্রাণের জামালপুর জেলা আজ উন্নত ও আধুনিক জনপদ হিসেবে পরিগণিত। সেই জন্য তাঁকে আধুনিক জামালপুরের জনক বা রূপকার বলেও অভিহিত করে মানুষ। মির্জা আজম জামালপুরে শিক্ষা আন্দোলনের রূপকার হওয়ার কারণে তাঁকে শিক্ষাবন্ধু আখ্যা দেয়া হয়েছে। কোনো নেতৃত্বপ্রধান ব্যক্তির নিকট থেকে এ ধরনের শিক্ষা বিষয়ক উন্নয়ন সত্যি বিরল। তার গড়া অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২৩ সাল অব্দি পাঠগ্রহণ করেছেন প্রায় পঁচিশ হাজার জন শিক্ষার্থী। এঁদের অনেকেই দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। দেশ ও দশের সেবা করে যাচ্ছেন তারা।
মির্জা আজম মনে করেন, উন্নয়নের প্রধান শর্ত হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষিত জনগোষ্ঠী কখনও পিছিয়ে থাকে না। তাই সবার আগে তিনি উন্নয়নের প্রধান ভিত্তি হিসেবে শিক্ষাকেই বেছে নিয়েছেন। তাঁর এ ধরনের ভাবনা-ই আজ দেশের অন্যান্য জনপ্রতিনিধি থেকে তাঁকে অনন্য করে তুলেছে।
১৩ সেপ্টেম্বর মির্জা আজম, এমপির জন্মদিন। দেশের ৩০০ আসনেই মির্জা আজমের মতো জনপ্রতিনিধি বের হয়ে আসুন- তাঁর জন্মদিনে এই আমাদের প্রত্যাশা।
মোহাম্মদ জাকিরুল ইসলাম
লেখক: রাজনৈতিক কর্মী
এসবিডি/এবি/
মন্তব্য করুন: